ঘূর্ণিঝড় মোরা ৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়ে সরে গেলো ভারতে

 ২০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত : বেশি ক্ষতি সেন্টমার্টিনের : অন্ধকারে উপকূলীয় এলাকা

স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হেনে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে বাংলাদেশের সীমা অতিক্রম করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি বৃষ্টি ঝরিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতে গিয়ে নিঃশেষ হয়। মোরার আঘাতে অন্তত ৭ জন মারা গেছেন। সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি নদ-নদীতে স্বাভাবিকের বেশি উচ্চতার জোয়ার হয়। জোয়ারে ভাঙা বাঁধ দিয়ে কিংবা বাঁধ উপচে পড়ে পানিতে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কয়েকশ’ গ্রাম ও জনপদ। ভেঙে পড়েছে অনেক গাছপালা। ট্রান্সফরমার ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বহু এলাকা বিদ্যুত বিহীন হয়ে পড়েছে। এদিকে বৃষ্টি ঝরিয়ে মোরা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেতের পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শ্রীলঙ্কা থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোরা গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে আঘাত করে সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার।

এদিকে বৃষ্টি ঝরিয়ে মোরা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহা বিপদসংকেতের পরিবর্তে গতকাল ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় ও দক্ষিণের জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকা ৪-৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও ভোলায় মোট সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এই প্রতিবেদন তৈরির সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে দেখা যায় যে, বক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলায় তিনজন, রাঙ্গামাটি জেলা শহরে দুজন, বান্দরবানের লামা উপজেলায় একজন এবং ভোলার মনপুরা উপজেলায় এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এসব স্থানে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতির খবরও রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোরা নিয়ে আবহাওয়ার শেষ বুলেটিনে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে তারপর সাবধানে চলাচল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গত ২৬ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর ২৮ মে সকালে তা নিম্নচাপে এবং মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। সোমবার সন্ধ্যায় তা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অফিস। অনুমিত সময়েই মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি শক্তির বাতাস নিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে মোরা। তার ঘণ্টা পাঁচেক পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ মোরার শক্তি কমে আসার কথা জানান। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করায় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম শুরু করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে পণ্য খালাসের কাজ শুরু হলেও জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। একই সাথে শুরু হয়েছে শাহ আমনত বিমানবন্দরের বিমান চলাচলও। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়।