নগদ টাকা মূল্যবান মালামাল ডাকাতির পাশাপাশি নারী অপহরণের অপচেষ্টা : মারপিট পেটে লাথি

চুয়াডাঙ্গার টেংরামারী ও খেজুরতলা মাঠপাড়ায় ডাকাতদলের তা-ব : মসজিদের মাইকে প্রচার করে গ্রামবাসী সংগঠিত হলেও ধরতে পারেনি কাউকে 
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার টেংরামারী ও খেজুরতলা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতদল তা-ব চালিয়েছে। গতপরশু সোমবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ডাকাতদল পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতিসহ নারীদের টানাহেঁচড়া করে। একজনকে মারধরে আহতও করেছে ডাকাতদলের সদস্যরা। মসজিদের মাইকে প্রচার করে গ্রামবাসীকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও টিকি ছুঁতে পারেনি তারা। 
 চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নবগঠিত নেহালপুর ও কালুপোল এলাকায় যেভাবে ২০-২৫ জনের একদল ডাকাত ডাকাতির পাশাপাশি ডাকাতির শিকার পরিবারের নারীদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে, সেভাবেই গতপরশু চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা সংলগ্ন মোমিনপুর ইউনিয়নের টেংরামারী ও খেজুরতলা মাঠপাড়ায় তা-ব চালিয়েছে ডাকাতদল। ৫টি বাড়ি থেকে ডাকাতদল নগদ প্রায় দেড় লাখ টাকাসহ কয়েক লাখ টাকার মূল্যবান মালামাল ডাকাতি করেছে। খেজুরা মাঠপাড়ায় ডাকাতির সময় এক বধূকে তুলে নিতে চাইলে প্রতিরোধ করলে ডাকাতদল একজনকে মারধরে গুরুতর আহত করে। 
 সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা বলেছেন, টেংরামারী গ্রামের নঈমুদ্দিনের স্ত্রী আকলিমা খাতুন রাতে তারাবি পড়ে খাবার খেয়ে ঘরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারী ঘরে ঢোকে। ঘরের মালামাল উল্টেপাল্টে টাকা খুঁজতে থাকে। আকলিমার বড় ছেড়ে শান্তি এ সময় গ্রামের একটি চায়ের দোকানে ছিলেন। তার ঘরেরও মালামাল তছনছ করে এবং শান্তির স্ত্রী নাসরিনের পেটে লাথি মারে এক ডাকাত। হাতিয়ে নেয় নগদ ৮ হাজার টাকা। এরপর আকলিমাকে সাথে নিয়ে তার ছোট ছেলে ইছানুরের ঘর খুলতে বাধ্য করে ডাকাতদল। ইছানুরের ঘরের ছাদ করার জন্য গচ্ছিত কাঁথার ভাঁজে রাখা নগদ ১ লাখ টাকাসহ দুটি কানের দুল ও হাতের বালাসহ মূল্যবান মালামাল ডাকাতি করতে থাকে। এ সময় দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে শান্তি বাড়ির কাছে পৌঁছে দেখতে পান কয়েকজন অপরিচিত দাঁড়িয়ে। তাদের মতিগতি বোজার চেষ্টা করতেই শান্তিকে আটকানোর চেষ্টা করে ডাকাতদল। শান্তি দৌড়ে মসজিদে গিয়ে মোয়াজ্জিনের মাধ্যমে মাইকে প্রচার দিয়ে বলে ডাকাতি হচ্ছে আমার বাড়িতে। গ্রামবাসী যে যেখানে ছিলেন সেখান থেকে রাস্তায় বের হন। সংগঠিত হয়ে ডাকাতদলের পিছু নেয়। এ সময় ডাকাতদল খেজুরার মাঠের দিকে পালিয়ে যায়। এরপরই খেজুরা মাঠপড়ায় ডাকাতি শুরু করে ডাকাতদল। 
 রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ডাকাতদল খেজুরা মাঠপাড়ার আছির উদ্দীনের ছেলে গরু বেপারি বাদলের বাড়িতে ডাকাতদল হানা দিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকাসহ তিনটি মোবাইলফোন লুট করে। লাল্টুর স্ত্রী ভানু খাতুনের বাড়িতে হানা দিয়ে তার কানে থাকা ইমিটেশনের দুলুও খুলে নেয় ডাকাতদল। চতুর আলীর বাড়ি থেকে নগদ ৫ হাজার টাকাসহ মূল্যবান মালামাল শুধু ডাকাতিই করেনি, ডাকাতদলের কয়েকজন সদস্য তা-ব চালায়। জহির উদ্দিনের ছেলে চতুর আলী বলেন, ডাকাতদল এসেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। বাড়িতে থাকা টাকা দিতে বলে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বেটারবউকে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া বাড়িতে বোমা মেরে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর হুমকি দেয়। এ সময় ছেলে তরিকুল, জামাই তরিকুল মেয়ে রেখা খাতুন ও আলিহিমকে জিম্মি করে। উপাই না পেয়ে ডাকাতদলের হাতে ঘরে থাকা টাকা ৫ হাজার টাকা সোনার গয়না ও ৩ টি মোবাইলফোন ডাকাত দলের হাতে তুলে দেয়। 
চতুর আলীর বাড়িতে ডাকাতি শেষে একই গ্রামের আশির উদ্দিনের ছেলে বাদলের বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধোর করে নগত টাকা ও সোনার গয়না ডাকাতি করে। চতুর আলী জানাই, রাতে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলাম। সে সময় কারেন্ট ছিলো না। একদল সন্ত্রাসী বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে। সমিতি থেকে তোলা বাড়িতে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও মোবাইলফোন ডাকাতি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বুকের ওপর চড়ে মারধর করতে থাকে। ঘরে থাকা দুটি মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় ডাকাতরা। তাদের চিৎকারে বাদলের ভাই রতন, লিপন ও শিপন এগিয়ে আসলে তাদেরও মারধর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। এছাড়া প্রতিবেশী ইসাউদ্দিনের ছেলে লাল্টু, রামজানের ছেলে ওহিদ, আজগারের ছেলে ওহিদুল ও ভাদুর ছেলে জামালকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। অপরদিকে ডাকাত দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে চতুর আলীর স্ত্রী চাঁদপুর গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীকে খবর দিলে চাঁদপুর, খেজুরতলা ও টেংরামারী গ্রামের লোকজন ডাকাত দলের পিছু নেয়। ডাকাত দল নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। 
এ বিষয়ে গতকাল সরেজমিনে গেলে টেংরামারী গ্রামের শান্তি, খেজুরতলা গ্রামের চতুর আলী ও বাদলসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডাকাত দলে প্রায় ২০-২৫ জন ছিলো। বাড়িতে ৮-১০ জন ঢোকে ও বাকি ডাকাতরা বাইরে পাহারাতে ছিলো। ডাকাত দলের কয়েকজনের মুখ কাপড় ও গামছা দিয়ে বাধাঁ থাকলেও কয়েকজনের মুখ খোলা ছিলো। তাদের প্রত্যেকের হাতে ধারালো দা, কুড়ুল ও দুই ডাকাতের কাঁধে স্কুলব্যাগ ছিলো। দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উদ্বিগ্নতা কাটেনি। বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক জানান, ডাকাতির কোনো খবর আমি পাইনি।