এবার সেই জজের স্ত্রী নাতাশা পিতার বাড়ির গৃহপরিচারিকার ওপর চালিয়েছেন মর্মান্তিক নির্যাতন

আলমডাঙ্গার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ললু মাস্টারের বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে দাবি তোলেন বিচারের : আমেনা হাসপাতালে

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো/ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: সেই জজের স্ত্রী নাতাশা সাতক্ষীরার পর এবার আলমডাঙ্গায় পিতার বাড়ির গৃহপরিচারিকার ওপর অভ্যাসবশত মর্মান্তিক নির্যাতন চালিয়েছেন। ছোট বাটি খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে গৃহপরিচারিকা আমেনা খাতুনের গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের অপচেষ্টা ও  দেয়ালের সাথে মাথা আছড়ে আছড়ে নির্যাতন চালান তিনি। জজের উপস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের বাবুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আমেনা খাতুনকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে গেটের বাইরে ফেলে রাখা হয়। এ সময় এলাকার বিক্ষুব্ধ মানুষ নাতাশার পিতার বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে জানালা ভাঙচুর করে। আমেনাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গৃহপরিচারিকা আমেনা খাতুনের জ্ঞান ফেরেনি।

 

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আসাননগর গ্রামের আমিরুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা খাতুন (৩২) গৃহপরিচারিকার কাজ করেন উপজেলা শহরের বাবুপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লুলু মাস্টারের বাড়িতে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে লুলু মাস্টারের জামাই জজ নুরুল ইসলামের ছেলে শিশু রাইয়ান ও গৃহপরিচারিকার ছেলে শিশু আবিরের মধ্যে একটা বাটি খোঁজাখুঁজি নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ ঘটনার জের ধরে জজ নুরুল ইসলামের উপস্থিতিতে স্ত্রী নাতাশা শিশু আবিরকে মারধর করেন। আবিরের মা গৃহপরিচারিকা আমেনা এর প্রতিবাদ করলে নাতাশা আমেনার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে ধরেন। এরপর দেয়ালের সাথে মাথা আছড়ে আছড়ে নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার আমেনা খাতুন অচেতন হয়ে পড়েন তাকে অচেতন অবস্থায় নাতাশা ও তার বাবা লুলু মাস্টার মিলে চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির গেটের বাইরে ফেলে রাখেন। সংবাদ পেয়ে কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মঞ্জুরুল ইসলামসহ এলাকার লোকজন আমেনাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালিদাসপুরস্থ আল-আরাফা ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি না হলে দ্রুত হারদীস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম শাইখ ফেরদৌস সন্ধ্যায় জানান, এখনও আমেনার জ্ঞান ফেরেনি। তবে আশা করা যায় শিগগিরই জ্ঞান ফিরবে।

 

আলমডাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর আলাল উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে জজের শ্বশুরালয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিবাদ জানায়। আলমডাঙ্গা থানার এসআই হাকিম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। বাড়ির মালিক লুলু মাস্টার বলেন, ছোট্ট একটা ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসী আমার জানালা দরজা ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তার জামাই জজ নুরুল ইসলাম এখন কোথায় চাকরি করেন এ প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি লুলু মাস্টার। তবে বিশ্বস্তসূত্র জানিয়েছে, জজ নূরুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা সাব-জজ হিসেবে কর্মরত।

 

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট সাতক্ষীরায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে নুরুল ইসলাম ও স্ত্রী নাতাশা ১০ বছর বয়সী কাজের শিশু বিথীকে নির্মম নির্যাতন করেন। পরে পুলিশ মারাত্মক আহত অবস্থায় শিশু বিথীকে উদ্ধার করে। জজ নুরুল ইসলাম ও স্ত্রী নাতাশা সে সময় ওই শিশুর মাথার চুল কেটে এবং হাতে, পিঠে ও নিতম্বে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন। যা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলে। এবার সেই জজের স্ত্রী নাতাশার বিরুদ্ধে আবারও গৃহপরিচারিকার ওপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। দুপুর পরে আবারও এলাকার যুব সম্প্রদায় চড়াও হয় নাতাশার বাপের বাড়ির সামনে। তারা বাড়ি ঘিরে রাখে। তারা দাবি করতে থাকেন সামান্যতম নীতি নৈতিকতাহীন, মনুষত্বহীন জজ ও তার স্ত্রী নাতাশার বিচার করতে হবে। বার বার গরিব মানুষের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার করবে তা মেনে নেয়া হবে না। প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, জজ নূরুল ইসলাম বখে যাওয়া এক মেয়েকে বিয়ে করে পারিবারিকভাবেও যেমন হেনস্থার শিকার, তেমনি সামাজিকভাবেও বার বার অপদস্থ হচ্ছেন। এ ঘটনায় শহরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও। এদিকে এ মর্মান্তিক নির্যাতনের বিষয়টি জানানো হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেনকে। তিনি লোকমোর্চার টিম নিয়ে আমেনাকে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।