লন্ডনে বহুতল ভবনে আগুন

 

ভয়াবহ আগুনে ছাই হয়ে গেছে লন্ডনের একটি ২৪ তলার আবাসন। গত মঙ্গলবার রাতে পশ্চিম লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো মৃতের সংখ্যা ১২ জন হলেও পুলিশ জানিয়েছে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। একই সাথে ভেতরে বহু লাশ মিলবে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, হঠাৎ করে সৃষ্ট আগুন গ্রেনফেল টাউয়ারে যখন আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে তখনকার পরিস্থিতি ছিলো অত্যন্ত ভয়ানক। জানা যায়, ৮০ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যক্ষর্শীরা জানিয়েছেন, পশ্চিম লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনে আচমকা আগুন লেগে যায় ২৪ তলার আবাসন গ্রেনফেল টাউয়ারে। আবাসিকরা তখন ছিলেন গভীর ঘুমে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই আগুন দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়ে ২৪ তলার গোটা আবাসনে। ঘুমন্ত মানুষ জেগে উঠেই আহাজারি শুরু করেন, তাদের বিদীর্ণ চিৎকারে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। সন্দেহাতীতভাবেই এর ভয়াবহতা কল্পনাতীত। আগুনে আটকে পড়া আবাসনের বাসিন্দারা আর্তচিৎকার করতে থাকেন, প্রতিবেশীদের কাছে কাতর আর্জি জানাতে থাকেন তাদের বাঁচানোর জন্য। কেউ কেউ দূর থেকে ওই আবাসনের আগুন দেখে ভেবেছিলেন, মোবাইলফোনের আলো জ্বলছে। অথবা টর্চের। পরে তাদের ভুল ভাঙে। প্রাণে বাঁচতে জানালার কাঁচ ভেঙে কেউ শিশুসন্তানদের নিয়ে মাটিতে ঝাঁপ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এই ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনাতীত। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ জারি রাখুক এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক এমনটি কাম্য। প্রসঙ্গত, অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ছুটে যায় একের পর এক দমকল। দমকল-কর্মীরা ওই ভয়ঙ্কর আগুনের মধ্য থেকে অনেককে বের করে আনতে পারলেও, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান আশঙ্কা করছেন, এখনো বহু মানুষ আটকে রয়েছেন ওই বহুতল আবাসনে। ফলে যতো দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে এই ভয়ানক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে এমনটি প্রত্যাশিত। তথ্য মতে জানা গেছে, এখন প্রায় ভস্মীভূত ওই আবাসনটি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আর পরিস্থিতি এতোটাই ভয়ানক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি বলেছেন, আগামী কয়েক দিনে ওই বাড়ির ধ্বংসস্তূপ সরালে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়বে। যদিও মৃতদেহ শনাক্ত করতে অসুবিধা হচ্ছে। কাউকেই চেনা যাচ্ছে না। দেহগুলো গলে গেছে। আমরা বলতে চাই, কতোটা ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাঁচার জন্য মানুষ লাফ দিচ্ছে এই আবাসন থেকে তা অনুমান করা যায়। এছাড়া জ্বলন্ত ভবনটি থেকে বিভিন্ন অংশ খুলে নিচে পড়ছে। সেখান থেকে বিস্ফোরণ আর কাঁচ ভাঙার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, ধোঁয়ার কারণে উদ্ধারকাজ চালাতেও বেশ সমস্যা হচ্ছে। আটকে পড়া মানুষ বের হতে পারছেন না। এমনকি আরও ভীতিকর বিষয় হলো প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভবনের করিডোরগুলোতে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে একমাত্র জানালা ছাড়া ভবনটি থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এই ঘটনায় প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিক যেন পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়েই ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, ফলে লন্ডনের এই ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও বেশি সতর্কতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমনটি জরুরি বলেই আমরা মনে করি। সর্বোপরি লন্ডনের গ্রেনফেল টাউয়ারে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে সামলে নিতে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক।