আল বিদা মাহে রমজান

 

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ২৯ রমজান। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। প্রত্যেক জাতিরই একটি খুশির দিন থাকে, আর মুসলিম জাতির খুশির দিন হলো ঈদ। ঈদ আমাদেরকে সাম্য, সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শেখায়। হুজুর (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় আসার পর দেখলেন, মদিনার লোকেরা বছরে দুই দিন আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে আমোদফূর্তি এবং খেলাধুলায় লিপ্ত হয়। এটি ছিলো ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াত যুগের রীতি। হুজুর (সা.) সাহাবীদেরকে এটি করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন যে, আল্লাহতায়ালা এই দুই দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দুটি দিন তোমাদিগকে দান করেছেন- ঈদুল আজহার দিন এবং ঈদুল ফিতরের দিন (মেশকাত: আবু দাউদ)। ঈদের দিন নির্ভর করে চাঁদ দেখার ওপর।  হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙো (মেশকাত: মুসলিম)। ঈদের চাঁদ দেখার ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ)-এর নির্দেশ হলো, যদি মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না যায় তাহলে রোজা ৩০টি পূর্ণ করো (মুসলিম)। নিজ চোখে এবং খালি চোখে চাঁদ দেখার চেষ্টা করাও নবীজির একটি সুন্নত। এটি একটি অত্যন্ত সহজ হিসাব এবং সকলের জন্য এটাই সুবিধাজনক। এর ভেতরে কোনো জটিলতা নেই।  একটি দেশের মধ্যে যদি কোনো এক জায়গায় চাঁদ দেখা যায় তাহলে তা সেই দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।  তবে হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এক দেশের চাঁদ অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে না (মুসলিম)। ইসলাম অত্যন্ত সহজ একটি ধর্ম। পবিত্র কোরআনে চাঁদকে একটি ঝুলন্ত ক্যালেন্ডার এবং আল্লাহ তায়ালার কুদরতের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন চাঁদ দেখে আল্লাহর রসুল (সাঃ) আমাদের এই দোয়া পড়ার কথা বলেছেন, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি ওয়াছ ছালামাতি ওয়াল ইসলামি, রব্বী ওয়া রব্বুকাল্লাহ; হিলা-লু রুশদি ওয়া খইর। অর্থঃ হে আল্লাহ, এই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। হে চাঁদ তোমার ও আমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ (তিরমিজি)। আমরা অনেক সময় ঈদের নতুন চাঁদ দেখে সব কিছু ভুলে যাই, ইবাদতের কথা আর মনে থাকে না। অর্থাৎ ঈদের রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, যদি কোনো ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত জেগে ইবাদত করে তাহলে যেদিন অন্যান্য দিল মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না অর্থাৎ কিয়ামতের দিনের আতঙ্কের কারণে অন্যান্য লোকের অন্তর ঘাবড়ে গিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যাবে, কিন্তু দুই ঈদের রাতে জাগরণকারীর অন্তর তখন ঠিক থাকবে (তাবারানি)। সুতরাং ঈদের দিন রাতেও আমাদের বেশি বেশি ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত। (লেখক: অধ্যাপক, এফএমআরটি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।