চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কের নাগরদোলা থেকে পড়ে ভি.জে স্কুলের ছাত্র রিদু নিহত

যে ছিলো মা-বাবার একমাত্র সন্তান বাড়ির সকলের চোখের মণি সে শিশু আনন্দ করতে পার্কে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো বাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার: যে ছিলো মা-বাবার একমাত্র সন্তান, বাড়ির সকলের হৃদয়, সেই রিদু আনন্দ করতে পুলিশ পার্কে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রিদু তার চাচাতো ফুফাতো ও প্রতিবেশী ৪ ভাইবোনের সাথে পুলিশ পার্কের নাগরদোলায় উঠে দুর্ঘটনার শিকার হয়। সে তার

রিদু

নিজের মোবাইলফোনে নিজেই ছবি তুলতে গেলে আছড়ে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরদিকে চোখের সামনে পড়ে গিয়ে চাচাতো ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে শিশু তমা। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক আহমেদ রিদু (১৩) জেলা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার অ্যাড. ইমতিয়াজ আহম্মেদ উজ্জ্বলের ছেলে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থান জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে। পুলিশ পার্কের নাগরদোলায় উঠে আছড়ে পড়ে স্কুলছাত্র নিহত হওয়ার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দ্রুত শোকার্ত বাড়িতে ছুটে যান। তিনি শিশু রিদুর পিতার সাথে কথা বলেন। সান্ত¦না দেন। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলামও শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান। রিদুর সাথে থাকা শিশুদের সাথে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, রিদুর সাথে থাকা তার চাচাতো ও ফুফাতো ভাইবোনেরা নাগরদোলায় উঠে ভয় পাচ্ছিলো। এ সময় রিদু চলন্ত নাগরদোলায় দাঁড়িয়ে নিজের মোবাইলফোনে ছবি তুলে দেখাতে গিয়েই মূলত মাথায় ওপরের রডে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে। নিচে পড়ে নাগরদোলার অপর চেয়ার এসেও তাকে ধাক্কা দেয়।
চুয়াডাঙ্গা জজ আদালতের বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. ইমতিয়াজ আহমেদ উজ্জ্বল ও শাহিনারা পারভীন রুপালীর একমাত্র ছেলে ইসতিয়াক আহম্মেদ রিদু পরিবারের সকলের কাছেই ছিলো খুব আদরের। গতকাল শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যদের সাথে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে যাওয়ার কথা ছিলো। একমাত্র ছেলেকে অতো দূরে যেতে না দিয়ে পার্কে যাওয়ার আবদারে সাড়া দেন পিতা-মাতা। প্রতিবেশীর শিশু মেয়ে মিথিলা পারভীন, ফুফাতো ভাই ফয়সাল, চাচাতো দু বোন ক্যাথি ও তমার সাথে বিকেলে পুলিশ পার্কে যায় রিদু। পার্কে ছোটাছুটি করে সকলকে মাতিয়ে তোলে সে। ৬টার দিকে নাগরদোলায় ওঠার পর সে পড়ে প্রাণ হরাবে, সকলকে কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাবে কে জানতো? যখনই শুনেছে রিদু মারা গেছে, তখন পিতা-মাতাই শুধু নয়, বাড়ির সকলেই কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে, পুলিশ পার্কের মতো পার্কের নাগরদোলার কেন নিরাপত্তা বেল্ট রাখা হয়নি। বিদ্যুত চালিত নাগরদোলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাটি যেমন প্রশ্নবিদ্ধ তেমনই প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, নাগরদোলায় তেমন কোনো ত্রুটি নেই। মোবাইলফোনে সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। নাগরদোলায় থেকে পড়ে গেলে তাকে পার্কের লোকজনসহ পুলিশ সদস্যরা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশু রিদুর পিতার কোনো আপত্তি না থাকায় এবং কোনো মামলা না করার কারণে আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কানিজ নাঈম বলেছেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই মূলত শিশু রিদু মারা গেছে। ওর মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। তাছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়েছে।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোজাম্মেল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সেলিম উদ্দিন খান ও এমএম শাহজাহান মুকুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ও সৈয়দ হেদায়েত হোসেন আসলাম, আইনজীবী রফিকুল আলম রান্টু, আকসিজুল ইসলাম রতন, শরীফ উদ্দিন হাসু ও শাহজাহান আলীসহ আইনজীবীরা মরহুমের বাড়ি ছুটে যান এবং পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।