নব্য জেএমবি আমিরের আস্তানায় অভিযান : তিন নারী আটক

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গোলাগুলি বা হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ছিলেন স্থানীয়রা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: নব্য জেএমবির কথিত আমির আইয়ুব আলী বাচ্চুর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে পুলিশ উপজেলার বামনপাড়া তালতলা মসজিদ সংলগ্ন ওই জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছিলো। পরে রাত তিনটার দিকে সেখান থেকে সুইসাইড ভেস্টসহ তিন নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে থেকে এবং ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও বোমা নিস্ক্রিয়কারী ইউনিট এবং জেলা পুলিশের সমন্বয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ওই আস্তানায় আরেক দফা অভিযান চালানো হয়। রাত ৯টার দিকে এ অভিযান শেষ হলেও আর কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি এ অভিযানে গোলাগুলি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অভিযান শেষ করা পর্যন্ত চারটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের মাধ্যমে ভেড়ামারা থানা পুলিশ খবর পায় তালতলা মসজিদের পাশে একটি টিনশেড বাড়িতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে রাখে। পরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযানে অংশ নিতে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য জঙ্গি আস্তানার দিকে অগ্রসর হতে থাকলে সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত তিথি নামের এক নারী জঙ্গি তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। তবে বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই আইনশৃংখলা বাহিনী ওই নারীকে আটক করে। পরে পর্যায়ক্রমে ওই বাড়িতে অবস্থানরত সুমাইয়া ও টলি নামের আরও দুই নারী জঙ্গিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এছাড়া তিথির ৬ মাসের মেয়ে আফিয়া হাসান ও টলি বেগমের ৭ বছরের মেয়ে নোভা আক্তার তাদের সঙ্গে ছিল। আটকদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক, একটি ৭ পয়েন্ট ২ বোরের বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন ও গান পাউডার উদ্ধার করে। ওই বাড়ির ভেতরে আরো বিস্ফোরক দ্রব্য ও সুইসাইড ভেস্ট থাকতে পারে আশংকায় বাড়িটি ঘিরে বিপুলসংখ্যক আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এমনকি ওই বাড়ির আশপাশে মানুষ-জনকে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এবং পার্শ্তবর্তী বাড়ির লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরে গতকাল দুপুরে ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পাঁচ সদস্যের বোমা নিষ্ক্রিয় টিম গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসে। পরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, বোমা নিস্ক্রিয়কারী ইউনিট ও স্থানীয় ও জেলা পুলিশ এবং র্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে বাড়ির ভেতরে দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন টেপিড পাঞ্চ’। গতকাল বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে অভিযান শুরু হয়। ৫টা ৪৫ মিনিটে বাড়ির বিদ্যুত্ সংযোগ বিছিন্ন করা হয়। ৬টা ৮ মিনিটে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ৬টা ৪৬ মিনিটে আরেকটি, ৮টা ৩৬ মিনিটে তৃতীয় বোমা এবং রাত পৌনে নয়টার দিকে আরেকটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রাত ৯ টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আব্দুল মান্নান জানান, ওই বাসা থেকে শুক্রবার গভীর রাতে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিথি (২৮) নামের নারী হচ্ছে ‘নব্য জেএমবি’র আমীর আইয়ুব আলী বাচ্চুর স্ত্রী।  সুমাইয়া (২৭) হলেন ‘নব্য জেএমবি’র সেকেন্ড ইন-কমান্ড আব্দুর রশিদের ওরফে তালহার স্ত্রী এবং টলি বেগম (৩৫) হলেন ডিশ ব্যবসায়ী আরমানের স্ত্রী। এরা জঙ্গি তত্পরতার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তিনি আরো বলেন, তিথি ও সুমাইয়ার বাড়ি নাটোর জেলায় এবং টলি বেগমের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর গ্রামে। গত ২৯ জুন তিথি ও সুমাইয়া এসে টলি বেগমের বাড়িতে আত্নীয় পরিচয়ে অবস্থান করছিল বলে পুলিশ জানায়।

জানা গেছে, জঙ্গি আস্তানার টিনশেড বাড়িটির মালিক ভেড়ামারা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অফিস সহকারী মাসুদ। টিনশেড বাড়ির পাশেই নিজের অপর তিনতলা বাড়িতে বসবাস করেন মাসুদ ও তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন। মাসুদের স্ত্রী নাসিমা খাতুন জানান, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আরমান হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ১২শ’ টাকায় টিনশেড বাড়িটি ভাড়া নেয়। আরমান পেশায় ডিস ব্যবসায়ী এবং তার স্ত্রী টলি বেগম সেলাইয়ের কাজ করেন বলে বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় তথ্য দিয়েছিল। তবে ঘটনার পর থেকে ভাড়াটিয়া আরমানের কোন সন্ধান মিলছে না। তিনি আত্নগোপন করেছেন বলে পুলিশ ধারনা করছে।

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর হোসেন খন্দকার জানান, আটককৃত নারীরা জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। বাড়ির ভাড়াটিয়া আরমানের স্থায়ী ঠিকানায় খোঁজ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আরমানের সন্ধানে অভিযান চলছে।