নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের তিতুদহ ইউনিয়ন বিভক্ত করে গেজেট প্রকাশ ॥ গেজেট প্রকাশের দু বছরেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় জনমনে চাপা ক্ষোভ

বেগমপুর প্রতিনিধি: নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পুনর্গঠন এবং বিভিন্ন নামে নতুন নতুন ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। তারি ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন বিভক্তি হয়ে পুনর্গঠিত তিতুদহ ইউনিয়ন এবং নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন। সে লক্ষ্যে গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর একটি স্বার্থনেষী মহল ইউনিয়ন বিভক্তি নিয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করেছে। গেজেট প্রকাশারে দু বছর অতিবাহিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। ফলে ইউনিয়ন বিভক্তির লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অপরদিকে ইউনিয়ন দুটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন গ্রহণ করেছেন আইনি পদক্ষেপ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ভৌগলিক ও জনসংখ্যার দিক বিবেচনা করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬ নং তিতুদহ ইউনিয়ন বিভক্ত করে পুনর্গঠিত তিতুদহ ইউনিয়ন এবং নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন নামে দু’টি ইউনিয়ন গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক প্রেরিত পত্র প্রাপ্তির পর স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পলি¬ উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখের ৬৮৬ নং পত্রের নির্দেশক্রমে এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধন আইন ২০০৯ এর ১১ ধারা মোতাবেক জেলা প্রশাসকের ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে তৎতকালীন জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন ২৪ জুন ২০১৫ তিতুদহ ইউনিয়নকে বিভক্ত করে নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন এবং তিতুদহ ইউনিয়নকে পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুলীপি প্রেরণ করেন। তারই আলোকে ২৪ সেপ্টম্বর ২০১৫ সালে পুনর্গঠিত তিতুদহ ইউনিয়ন এবং নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন হিসাবে গেজেট প্রকাশিত হয়। যেখানে পুনর্গঠিত তিতুদহ ইউনিয়নে চাঁদপুর ও নুরুল্লাপুর গ্রাম নিয়ে ১ নং ওয়ার্ড, গিরিশনগর, আড়িয়ারচোক, ৬৩ আড়িয়া ও ৬২ আড়িয়া গ্রাম নিয়ে ২ নং ওয়ার্ড, ছোটসলুয়া ৩ নং ওয়ার্ড, বলদিয়া মাদরাসাপাড়া ও কাজলাপাড়া নিয়ে ৪ নং ওয়ার্ড, বলদিয়া বাইনেগাড়িপাড়া ও পুরাতনপাড়া নিয়ে ৫ নং ওয়ার্ড, বড়সলুয়া দক্ষিণপাড়া ৬ নং ওয়ার্ড, বড়সলুয়া উত্তরপাড়া ৭ নং ওয়ার্ড, হুলিয়ামারিপাড়া ৮ নং ওয়ার্ড ও তিতুদহ গ্রাম নিয়ে ৯ নং ওয়ার্ড গঠিত হয়। অপরদিকে নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নে কালুপোল গ্রাম নিয়ে ১ নং ওয়ার্ড, গোষ্ঠবিহার ও খেজুরতলা গ্রাম ২ নং ওয়ার্ড খাড়াগোদা ও জামালপুর গ্রাম নিয়ে ৩ নং ওয়ার্ড, গড়াইটুপি ও বিত্তীরদাড়ি ৪ নং ওয়ার্ড, তেঘরি ও কলাগাছি গ্রাম ৫ নং ওয়ার্ড, গহেরপুর ৬ নং ওয়ার্ড, বাটিকাডাঙ্গা ও সুজায়েতপুর ৭ নং ওয়ার্ড, সড়াবাড়িয়া ও খাসপাড়া ৮ নং ওয়ার্ড, গবরগাড়া ও ছিলন্দিপাড়া গ্রাম নিয়ে ৯ নং ওয়ার্ড গঠিত হয়।
গত বছর ইউপি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ইউনিয়ন ভাগাভাগি নিয়ে একটি স্বার্থনেষী মহল হাইকোর্টে ৩টি রিট করে। ফলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেও আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন থেকে পিছিয়ে আসে। এ নিয়ে ইউনিয়ন দুটিতে চলতে থাকে নানা সমীকরণ। রাজনৈতিক লাভ লোকসানের হিসাব নিকাশ করে অবশেষে সে সমস্ত রিট তুলে নেয় রিটকারীরা। ইউনিয়ন জুড়ে বইতে থাকে নির্বাচনী হাওয়া। অনেকেই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে চালায় বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা। নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হলে প্রথমে ইউনিয়ন দু’টিতে প্রশাসক নিয়োগ প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে ১৩ জুন বর্তমান জেলা প্রশাসন তিতুদহ ইউনিয়নে সদর উপজেলা সমাজ সেবা এবং গড়াইটুপি ইউনিয়নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দিতে নাম প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন। ইউনিয়ন দুটিতে প্রশাসক নিয়োগ হতে যাচ্ছে এমন সংবাদে আবারও আলোচনায় সরব হয়ে ওঠে ইউনিয়নদ্বয়ের মানুষ। জনশ্রুতি রয়েছে প্রশাসক নিয়োগ ঠেকাতে একটি স্বার্থেনেষী মহল আবারও আইনি জটিলতা সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এমন সংবাদে ইউনিয়নবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকেই তা মোকাবেলা করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে।
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিয়ন বিভক্তি করার জন্য নিরন্ত পরিশ্রম করেছি। জনগণ তাদের নেতা নির্বাচিত করবে এটাই নিয়ম। আমি জনগণের মতামতের বাইরে না। সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান টিপু, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, আব্দুল মতিন খোকন, শুকুর আলী বলেন, যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে ইউনিয়ন বিভক্ত হয়েছে তা বাস্তবায়ন চাই ইউনিয়নবাসী। জনগণের মতামতকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। কেউ যদি বাঁকা রাস্তায় হাটে সেটা তার ব্যাপার। কারণ জনগণ এখন অনেক সচেতন। তবে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ার পর তা দীর্ঘ মেয়াদী হলে জটিলতা সৃষ্টি বাড়বে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। নির্দেশনা এলে সে মোতাবেক দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিতুদহ ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র আছে ১৫টি। যেখানে ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৪২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটর ৭ হাজার ২৬৭, নারী ভোটার ৭ হাজার ১৬১ জন। নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের ভোটর কেন্দ্র ১৬টি। মোটর ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ২৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ২৬৭, নারী ভোটার ৭ হাজার ১৬১ জন। তবে ইউনিয়নবাসীর দাবি যথাসময়ে ইউনিয়ন দু’টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে নাগরিক সুবিধা এবং উন্নয়নের ধারা ত্বরান্বিত হোক।