বৃষ্টিতে বটগাছের নিচে আশ্রয় : বজ্রপাতে শিশুসহ নিহত ৫ আহত ৪

 

কুষ্টিয়া মিরপুরের কুশাবাড়িয়া পয়ারী আটিগ্রাম ও ভাগাইপুরে এখন শোকের মাতম

শরিফুল ইসলাম রোকন/সোহেল হুদা: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পয়ারী মাঠে মশাতলা নামক স্থানে বজ্রপাতে শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৫ জন। গতকাল রোববার দুপুরে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে তারা সকলেই মশাতলা নামক স্থানে এক বটগাছের নিচে আশ্রয় নেয়। সে সময় আকস্মিক বজ্রপাতে এ মর্মান্তিক প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামসূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার দুপুর ১২টার পর কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুশাবাড়িয়া এলাকায় হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। সে সময় মাঠের কয়েকজন কৃষক বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পয়ারী মাঠের মশাতলার একটি বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন। এছাড়া সে সময় একই পথে যাতাযাতকারী পাখিভ্যানের কয়েকজন যাত্রিও একই বটগাছ তলায় আশ্রয় নেন। এর কিছুক্ষণ পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আকস্মিকভাবে বজ্রপাত ঘটে বটগাছের গোড়ায়। ফলে বিদ্যুতায়িত হয়ে সাথে সাথে মৃত্যু ঘটে ১ শিশুসহ ৫ জনের। আহত হয় আরও ৪ জন।

নিহতরা হলেন- কুশাবাড়িয়া গ্রামের মৃত আফতার মণ্ডলের ছেলে পাখিভ্যানের চালক আব্দুস সাপ্তার (৩৭), পয়ারী গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মোশারফ আলী (৫৫), আটিগ্রামের ছমির উদ্দীনের ছেলে শাহীনুর রহমান (৪৫), একই গ্রামের মৃত রহম বিশ্বাসের ছেলে আবুল কাশেম (৪৫) ভাগাইপুর গ্রামের হোসেন আলীর ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুপুত্র আশিকুর রহমান আশিক। অন্যদিকে আহতরা হলেন– ভাগাইপুরের সজিবুল ইসলামের ছেলে আদরী খাতুন (৩৫) ও মেয়ে ময়ুরী (২০), আজিরুলের স্ত্রী আনেসা খাতুন (৪৫) ও নিহত আশিকের মা মরিয়ম (৩৮)। আহতদের উদ্ধার করে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত দরিদ্র পাখিভ্যানচালক আব্দুস সাপ্তার ভ্যানে যাত্রী নিয়ে স্থানীয় সুঁড়সুঁড়ি বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বৃষ্টির কারণে বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন। তিনি ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। নিহত শাহীনুর রহমানও পাখিভ্যানচালক। তিনি স্থানীয় হাটে হাঁস বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে ওই বটগাছতলায় ছুটে যান। তিনি ছিলেন ১ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। নিহত আবুল কাশেমও স্থানীয় হাটে ক্যাম্বেল হাঁস বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে ওই বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন। তিনি ছিলেন ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। নিহত শিশুপুত্র আশিকুর রহমান আশিক দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেকের মত বটগাছতলায় ছুটে গিয়েছিলো।

গ্রামবাসী জানায়, নিহত মোশারফ নিজেই পয়ারী মাঠে ওই বটগাছ লাগিয়ে যত্ন-আত্তি করে বড় করে তুলেছিলেন। বটগাছের গোড়া ইট সিমেন্ট দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। নিজের নামে স্থানটির নাম রেখেছিলেন ‘মশাতলা’। কিন্তু আল্লাহর কী লীলাখেলা নিজ হাতে লাগানো সেই বটগাছের নিচে, সেই মশাতলায়ই মশা অর্থাৎ মোশারেফ আলীর মৃত্যু হলো। নিহত মোশারেফ আলী ১ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক ছিলেন।

মিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত ৩ জনের লাশ স্বজনরা সাথে সাথেই বাড়ি নিয়ে গেছেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে নিহত বাকি দুজনের লাশও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আহতরা সকলেই এখন অনেকটা সুস্থ।