গাংনীতে ওঝার অপচিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু : কথিত সেই ওঝা জয়নাল গাঁজাসহ গ্রেফতার

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ধর্মচাকী গ্রামের ওঝা জয়নাল হোসেনকে (৪৭) ২শ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে চোখতোলা যাত্রী ছাউনির সামনে থেকে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। জয়নাল আবেদীনের অপচিকিৎসায় গত শনিবার সন্ধ্যায় সর্প দংশনের শিকার এক শিশুর মৃত্যু হয়।
গ্রেফতার জয়নাল আবেদীন ধর্মচাকী গ্রামের মাঠপাড়ার বানেছ আলীর ছেলে। সে চিহ্নিত গাঁজাসেবী ও মাদক বিক্রেতা বলে জানা গেছে। গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, এক ক্রেতার কাছে গাঁজা বিক্রির জন্য জয়নাল হোসেন মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার চোখতোলা যাত্রী ছাউনির কাছে অবস্থান করছিলো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাংনী থানার এসআই মাহতাব উদ্দীন সঙ্গীয় এএসআই মাহবুব ও ফোর্স নিয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ২শ গ্রাম গাঁজাসহ জয়নালকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গতকালই এসআই মাহতাব উদ্দীন বাদি হয়ে জয়নালের নামে গাংনী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে তাকে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। জয়নাল হোসেন একজন চিহ্নিত গাঁজাসেবী ও গাঁজা বিক্রেতা। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলো বলে জানান ওসি।
গত শনিবার ধর্মচাকী গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিমের শিশু কন্য হাবিবা খাতুনকে (৫) নিজ বাড়িতে সর্প দংশন করে। গ্রাম্য ওঝা হিসেবে পরিচিতি জয়নাল হোসেনে কাছে বিষ নামানোর জন্য নিয়ে যায় পরিবার। ঝাড়ফুঁক দিয়ে হাবিবার শরীর থেকে বিষমুক্ত করার দাবি করেন জয়নাল। হাবিবাকে বাড়িতে নেয়া হয়। কয়েক দফা ওঝার ঝাড়ফুঁকে হাবিবার বিষমুক্ত করার নাটক করে ওঝা। কিন্তু ঝাড়ফুঁকে কি আর সাপের বিষ নামে? সন্ধ্যায় হাবিবা মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়লে পরিবারের লোকজন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছুনোর আগেই তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারকে জানান কর্তৃব্যরত চিকিৎসক সামসুল আরেফিন। ঝাড়ফুঁকে সাপের বিষমুক্ত করা যায় না এবং কাউকে সর্প দংর্শন করলে দ্রুত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিতে হবে বলে পরামর্শ প্রদান করেন চিকিৎসকর। ওঝাঁর অপচেষ্টার খবর পত্রিকায় প্রকাশ হলে চারদিকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এদিকে ওঝা জয়নাল হোসেন গাঁজাসহ গ্রেফতার হলে খবর পায় শিশু হাবিবার পরিবার। কিন্তু শিশুর মৃত্যুর জন্য তারা মামলা করতে রাজি হয়নি। তাই বিষ নামানোর অপচেষ্টার বিষয়ে জয়নালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান গাংনী থানার ওসি।