শ্যামলীর সন্তান নিয়ে আতুরঘরের নাটক সাজিয়েছেন ফরিদা

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দেড় সপ্তাহ আগেই সন্তান হওয়ার কথা উল্লেখ করে ভুল তথ্যের নোটারি পাবলিক

স্টাফ রিপোর্টার: ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই বিক্রি হওয়া নবজাতককে নিয়ে আতুরঘরের নাটক সাজিয়েছেন আলমডাঙ্গা পাঁচকমলাপুর মাঝপাড়ার গৃহবধূ ফরিদা খাতুন। তিনি ওল্টু রহমানের স্ত্রী। বিয়ের দীর্ঘ দেড় যুগেও এ দম্পতির ঘরে সন্তান না আসায় অন্যের সন্তান দত্তক নেয়ার নোটারি পাবলিক করলেও তাতে দেয়া তথ্যের প্রায় সবই ভুয়া। শুধু তাই নয়, দত্তক নেয়া ওল্টুর স্ত্রী গত কয়েক মাস ধরে অন্তঃসত্ত্বা সেজে ঘুরতে থাকেন। পিতার বাড়ি হাতিকাটায় অবস্থান নেন। অন্যের সন্তান হাতে পাওয়ার পর তিনি স্বামীর বাড়ি ফিরে নিজেরই সন্তান হয়েছে বলে প্রচার করে আতুরঘরে অবস্থান নেয়। গতকাল বিকেলে ফরিদার কোলে চুয়াডাঙ্গা কলোনির আশিকুরের স্ত্রী শ্যামলীর সিজার করে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক কেমন আছে তা দেখতে গেলে কমলপুরের লোকজনসহ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ফরিদা খাতুন এখন আঁচিঘরে, ওখানে যাওয়া যাবে না।
জানা গেছে, আশরাফুল ইসলাম আশিকুর এক সময় চুয়াডাঙ্গার কলোনির বাসিন্দা ছিলো। তখন বিয়ে করে দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ার লুৎফর রহমানের মেয়ে শ্যামলীর সাথে। বিয়ের পর এদের কোলে আসে কন্যাসন্তান। কলোনিপাড়া থেকে আশিকুর তার শ্বশুরবাড়ির মহল্লায় একটি বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে। সেখান থেকে উঠে এসে জেলা শহরের আরামপাড়ায় বসবাস করতে থাকে। এরই মাঝে শ্যামলী খাতুন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। অপরদিকে হাসপাতাল সড়কের আল্লার দান ফার্মেসির মালিক দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ার হুমায়ুনের মাধ্যমে হাতিকাটার নান্নু নবজাতকের সন্ধান শুরু করেন। গতপরশু হাসপাতাল সড়কের ইউনাইটেড ক্লিনিকে শ্যামলীর শরীরে অস্ত্রোপচার করে পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ করা হয়। শ্যামলীর জ্ঞান ফেরার আগেই সন্তান সরিয়ে নিয়ে হুমায়ুন তুলে দেন নান্নুর হাতে। বিষয়টি জানাজানি হলে ইউনাইটেড ক্লিনিকে শ্যামলীর নিকট বিস্তারিত জানতে গেলে প্রথমে শ্যামলী খাতুন ও তার শয্যাপাশে থাকা মা ঘটনাটি আড়াল করতে চাইলেও পরে উপরোক্ত তথ্য দেন। তারই ভিত্তিতে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রতিবেদন। শ্যামলী যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখনই ফার্মেসি মালিক হুমায়ুনের মাধ্যমে হাতিকাটার নান্নুর রহমান যোগাযোগ করে শ্যামলীর স্বামী আশিকুরের সাথে। মৌখিক চুক্তি হয়, গর্ভে যে সন্তানই থাকুক, তা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তুলে দিতে হবে। বিনিময়ে অন্তঃসত্ত্বা শ্যামলীর যাবতীয় চিকিৎসাসহ নগদ টাকা দেয়া হবে। চুক্তি মোতাবেক সন্তান হওয়ার দেড় সপ্তাহ আগেই নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সন্তান দত্তক নেয়ার দলিলও প্রস্তুত করা হয়। অবাক হলেও সত্য যে, নোটারি পাবলিকে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তার প্রায় সবই ভুয়া। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই যেমন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তেমনই ফরিদাকে নবজাতকের মা শ্যামলীকে আপন বোন বলে দাবি করা হয়েছে। আদৌতে শ্যামলী ওই ফরিদাকে চেনেই না। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় সন্তান বিক্রির খবর প্রকাশের পর শ্যামলীর মা ও শাশুড়ি দুজনে হাতিকাটার নান্নুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে নবজাতক ফেরত নিতে গেল কোনো হদিস না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘কি দিয়ে সব কি যে হয়ে গেলো তার কিছুই বুঝছিনে। শুনেছিলাম সব গোপন থাকবে, এখন দেখছি সবই জানাজানি হয়ে গেছে।’ এ সময় সেখানে সাংবাদিক উপস্থিত হলে নান্নুর বাড়ি থেকে বলা হয়, নান্নু চট্টগ্রামে গেছে। নবজাতক কোথায়? এ বিষয়ে নান্নুর বাড়ির কেউ কিছু জানে না বলে জানালে শুরু হয় নবজাতকের অনুসন্ধান। খুঁজতে গিয়ে পাওয়ায় যায় হাতিকাটা গ্রামের মৃত মকছদে আলীর মেয়ে ফরিদার কোলেই তুলে দেয়া হয়েছে শ্যামলীর সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলে। ফরিদা কোথায়? তার পিতার বাড়ির প্রতিবেশীদের কয়েকজন বললেন, আনুমানিক ২০ বছর আগে ফরিদার সাথে বিয়ে হয়েছে পাঁচকমলাপুরের ওল্টুর সাথে। বিয়ের এতোদিনে সন্তান আসেনি। কিছুদিন ধরে ফরিদা পিতার বাড়িতে থাকতে শুরু করে। গতপরশু সোমবার সে সন্তান হাতে পেয়ে স্বামীর বাড়ি পাঁচকমলাপুর গেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচকমলাপুর ফরিদার কোলে শ্যামলীর সন্তান কেমন আছে দেখতে গেলে বাড়ির লোকজন চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগের জন্য বলেন। চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম ম-লের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফরিদা খাতুন রয়েছেন আঁচিঘরে। এখন সেখানে যাওয়া যাবে না।
সন্তান কি ফরিদার গর্ভজাত? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে কীভাবে ওরা সন্তান নিয়েছে তা ফরিদার স্বামী ওল্টু বলতে পারবে। ওল্টুকে কাগজপত্র নিয়ে চেয়ারম্যানের নিকট আসতে বলেন। ওল্টু সেখানে হাজির হন নোটারি পাবলিক করা একটি কাগজ নিয়ে। তাতে সন্তান দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে নবজাতকের নাম দেয়া হয়েছে ফারদিন। নবজাতকের ভূমিষ্ঠ দেখানো হয়েছে গত ২১ জুন। অথচ শ্যামলী খাতুনের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় গত ৩ জুূলাই। তাছাড়া ফরিদার সাথে শ্যামলীর রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আপন বোন বলে দাবি করা হয়েছে। এসব অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো জবাব মেলেনি। একাধিকসূত্র বলেছে, টাকার বিনিময়েই নবজাতক কেনা-বেচা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এর প্রমাণ মিলবে।