পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নয়, অপরাধমূলক কর্মকা- রোধই কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য

চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়ায় প্রধান সড়কের পাশের ঝোপ-ঝাঁড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানকালে জেলা প্রশাসক

জহির রায়হান সোহাগ: না, ঝোপ-ঝাঁড় কেটে সড়কের দু পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাই প্রধান উদ্দেশ্য নয়। ডাকাতি, ছিনতাই, নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- রোধ করতেই জেলার প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রতিটি সড়কের দু পাশের ঝোপ-ঝাঁড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। পিছিয়ে নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা প্রশাসনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ঝোপ-ঝাঁড় কেটেছেন তারা। যদিও জেলা আইনশৃঙ্খলার মাসিক সভায় জেলা প্রশাসককে ওই কাজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। চুয়াডাঙ্গা জেলার কয়েকটি সমস্যার মধ্যে রাতে প্রধান সড়কে গাছ ফেলে বা দড়ি টানিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই অন্যতম। আর তাই ওই সব অপরাধমূলক কর্মকা- রোধ করতে জেলার প্রধান সড়কসহ প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নের সড়কগুলোর পাশে বেড়ে ওঠা ঝোপ-ঝাঁড় কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে প্রধান সড়কের পাশের ঝোপ-ঝাঁড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ শুরু করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আনজুমান আরা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৃনাল কান্তি দে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলক কুমার ম-ল, আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিনসহ ইউপি সদস্যবৃন্দ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জ্যাকি, সাবেক সদস্য গাজি ইমদাদুল হক সজল, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি, দফতর সম্পাদক শেখ সামি তাপু, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদসহ ছাত্রলীগের সকল ইউনিট।
এ সময় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ঝোপ-ঝাঁড় পরিষ্কার কথাটি শুনতে খুব ছোট বা সামান্য কাজ মনে হচ্ছে। কিন্তু গত এক মাস যাবত জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ওই কার্যক্রম করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। ওই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে জেলার নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলার কিছু বিষয়। ওই সব ঝোপ-ঝাঁড়ে ডাকাত বা ছিনতাইকারীরা লুকিয়ে থাকে। রাতে তারা অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটায়। পুলিশ বিভাগ জানানোর প্রেক্ষিতেই ঝোপ-ঝাঁড় কেটে পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথমে সরকারিভাবে ৪০ দিনের কার্যক্রম ইজিপিপির মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা করেছেন। কিন্তু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পরে এটা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। প্রতি ৩ মাস পর পর ওই কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু জানান, জেলার সকল উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে পৌর পরিষদ সহযোগিতা করে আসছে। আমরা গ্রিন চুয়াডাঙ্গা ও ক্লিন চুয়াডাঙ্গা দেখতে চাই। সন্ত্রাসমুক্ত চুয়াডাঙ্গা দেখতে চাই। জেলা প্রশাসনের কাজে উদ্বুব্ধ হয়ে সাধারণ মানুষও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে অংশ নিচ্ছে। এতে জেলার শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই হবে না, অপরাধমূলক কর্মকা-ও কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
পরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মক্রম পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন। পুলিশ সুপার জানান, চুয়াডাঙ্গায় যোগদানের পর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে জেলা প্রধান সমস্যাগুলোর কথা জানতে পারি। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে প্রধান সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি বা ছিনতাই। পরে জেলা আইনশৃঙ্খলার মাসিক সভায় বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি সেটি আমলে নেন। ওই কার্যক্রমের ফলে দুষ্কৃতীকারীরা সড়কের পাশে অবস্থান করতে পারবে না। এতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে বলে জানান তিনি। এদিকে সড়কের পাশের ঝোপ-ঝাঁড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জেলাবাসী। ওই ধরনের কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়ায় জেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানায় জেলাবাসী।