পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ

 

গাজীপুর জেলার কাশিমপুরে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিস্ফোরণে কারখানা ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। তখন সেখানে ৫০ জনের বেশি কর্মী কাজ করছিলো। ঘটনার পর ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৪৭ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়; পরে তাদের মধ্যে তিনজন মারা যায়। জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক জানান, রাত ১টার পর বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়। গতকাল আবার তল্লাশি শুরুর পর চারজনের লাশ পাওয়া যায়। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক জানিয়েছেন, গতকাল সকালে কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাশের ১০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

গাজীপুর জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত আট সদস্যের কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার খরচ দেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে সদর দফতরে স্টেশন কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান। এ কমিটিকেও সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটি প্রধান জানিয়েছেন, ঘটনার ৯ দিন আগেই বয়লারটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তবে এ কারণেই সেটি বিস্ফোরিত হয়েছিলো কি-না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা সাত কারণ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের কমিটিও কাজ করছে। আপাতদৃষ্টিতে শ্রম মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা যথাযথ। তাত্ক্ষণিকভাবে যা করণীয় তা তারা করেছে। তবে আমাদের শিল্প খাতে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে দুর্ঘটনা ঘটার পর সরকার ও প্রশাসনের এ ধরনের তৎপরতা রুটিন ওয়ার্ক। মালিকপক্ষও কিছু রুটিন ওয়ার্ক করে দায় সারতে চায়। বাস্তবে এ শিল্পের ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়নি।

তৈরি পোশাকশিল্প আমাদের অর্থনীতির প্রধান খাত। রফতানি আয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ আসে এখান থেকে। কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে এই শিল্পের। কর্মীদের ৮০ শতাংশই নারী। ফলে রফতানি আয় ও নারীর ক্ষমতায়নের নিরিখে এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। পোশাকশিল্পের সুষ্ঠু পরিবেশ, শ্রমিক ও স্থাপনা নিরাপত্তার বিষয়ে ক্রেতামহল বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিশেষ নজর দিতে বলেছে। অনেক ধরনের সুপারিশও করেছে। কিছু বাস্তবায়িতও হয়েছে, তবে নিরাপত্তা যে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়নি গাজীপুরের ঘটনা তার প্রমাণ। দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, শিল্প ও শ্রমিকের স্বার্থে অবিলম্বে সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।