গাংনী প্রেসক্লাবের আড্ডায় কৌতুক শিল্পি টুকু ॥ দর্শকদের আনন্দ-ভালোবাসাই আমার পরম পাওয়া

মাজেদুল হক মানিক: সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরা ও নির্মল আনন্দ দিয়ে যারা মানুষের আনন্দের খোরাক জুগাচ্ছেন তাদের অন্যতম একজন হচ্ছেন কৌতুক শিল্পি টুকু। পুরো নাম হুমায়ন কবিরী টুকু। জনপ্রিয় কৌতুক অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ‘কৌতুক টুকু’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। অ্যালবামের পাশাপাশি মঞ্চেও তিনি বেজায় সরব। নির্দিষ্ট কোনো অনুষ্ঠান কিংবা উৎসবে তাকে দেখা যায় মঞ্চ মাতাতে। বাংলাদেশের সিনেমার প্রতি মানুষের অনাগ্রহ অনেকটাই কৌতুকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করেছে। পথেঘাটে মোবাইলফোনে কিংবা চায়ের দোকানের টেলিভিশনে ডিস ক্যাবল চ্যানেলে প্রায় প্রতিনিয়তই কৌতুক দেখা হয়। এ অঞ্চলের মানুষের মনে কৌতুক স¤্রাট হিসেবে জায়গা করে নেয়া টুকুর সঙ্গে কথা হয়। গতকাল বুধবার রাতে মেহেরপুর গাংনী প্রেসক্লাবে তিনি আকস্মিক উপস্থিত হন। বন্ধুবর সাংবাদিকদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেন। আড্ডার ফাঁকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতিবেদককে সাক্ষাতকার দেন।
‘বিশ^ যদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে, আমি একা বসে রবো কর্তব্য সাধিতে’। রবিন্দ্রনাথের ওই কবিতা আউড়ে টুকু বলেন, অনেকটা সখের বশেই কৌতুক জগতে পা দিয়েছিলাম। এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতাদের ভালবাসা আমার এ পেশায় এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে। কৌতুকের মধ্যদিয়ে সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরা ও সচেতন করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে যাচ্ছি। নিজের কর্তব্য মনে করেই এ কাজ করে যাচ্ছি।
কৌতুক জগতের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সিড়ির নীচে বিড়ির দোকান’ বালতি ভরা ভালবাসা, টুকু এখন রুপভানের নায়ক ও ইজ্জত পাংচার’ কৌতুক অ্যালবাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রায় ৩০টি অ্যালবাম বের করেছেন।
ঝিনাইদহ শহরের পাগলা কানাই এলাকার বাসিন্দা এই কৌতুক স¤্রাট টুকু অভিনয় শুধু কৌতুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দুটি নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। বিশিষ্ট চলচিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও খালেদা আক্তার কল্পনার সঙ্গে ওই নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও মাহেন্দ্র ট্রাক্টর ও পচা সাবানের বিজ্ঞাপনে মূল চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।
কথায় কথায় চুটকিতে প্রেসক্লাবে উপস্থিত সবাইকে হাঁসালেন টুকু। জানান দিলেন কৌতুক তার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। কৌতুক ছাড়া তার মুখ দিয়ে কোন কথাই যেনো বের হয় না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন দাম্পত্য ও পেশাগত জীবনের গল্প। দাম্পত্য জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, স্ত্রী খাঁটি গৃহিনী। তার হাতের রাধা খাবার ছাড়া পেট ভরে না। তিন মেয়ের মধ্যে একজন মারা গেছে।
জীবনের স্মরণীয় ঘটনা বলতে গিয়ে বলে বলেন, মেয়ে মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। তখন এক উৎসুক মানুষ এগিয়ে এসে বললেন, ভাই এখানেও অভিনয় শুরু করেছেন। আসলে তিনি ভেবেছিলেন আমি মনে হয় অভিনয় করছি। পরে উনি প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।
তারকা খ্যাতিতে তিনি কোন জাতীয় পুরস্কার পাননি ঠিকই কিন্তু এ অঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের দর্শক-¯্রােতাদের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। তাইতো পথেঘাটে, হোটেলে, বাসে ভক্তরা তাকে ঘিরে ধরেন। প্রাণের কৌতুক শিল্পির সঙ্গে ছবি তোলা কিংবা আলাপ করতে চান। তাই স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা পড়লেও তিনি ভক্তদের উপর বিরক্ত নন। দর্শক-¯্রােতা-ভক্তদের কাছে সারাজীবন তিনি টুকু হয়েই থাকতে চান।
অ্যালবামের চেয়ে মঞ্চে অভিনয়ন করতে ভাল লাগে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মঞ্চের অভিযানে দর্শকদের খুব কাছে পাওয়া যায়। দর্শকদের আবেগ ও ভাললাগা অনুভব করা যায়। সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে থাকতে পেরে খুব আনন্দ পাই।
কৌতুক জগতের নানা সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন বাজারে সিডি চলছে না। যার ফলে কৌতুক অ্যালবাম দর্শকদের হাতে পৌঁছানো যাচ্ছে না। মেমোরি কার্ড চালু হলেও এর দাম বেশি। তাই সবার পক্ষে এতো টাকা দিয়ে মেমোরি কার্ডসহ কৌতুক অ্যালবাম কেনা সম্ভব নয়। যার ফলে এ ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও শিল্পিরা চরম সংকটের মধ্যে সময় পার করছেন। এর থেকে উত্তোরণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ঠদের সুদৃষ্টি কামনা করলেন।
‘আর নয় ভিক্ষা, কর্মই হোক দিক্ষা’ কাজী মহাম্মদ আলী পিকুর পরিচালনায় একটি অ্যালবাম তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা দেখতে পাবেন দর্শক। তাছাড়াও যুবক সমাজকে মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে মাদকবিরোধী অ্যালবাম ও গান তৈরি অব্যহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি।