সন্তান বিক্রি করা পাষ- পিতা আড়াল থেকে দিচ্ছে হুমকি ॥ ক্লিনিক ছেড়েছে মা শ্যামলী

বিক্রি করা নবজাতক ফেরত নিতে পাঁকমলাপুরে গিয়ে ধাক্কার শিকার দাদি সবেদা ॥ অটোচালককে মারপিট

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নবজাতক বিক্রির বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও পুলিশের তরফে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। তবে নবজাতকের দাদি ও নানি ক্রেতার কোল থেকে নিয়ে গর্ভধারিণী মায়ের কোলে ফেরত নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। গতপরশু বুধবার দু দফা পাঁকমলাপুর গ্রামে গেলেও নবজাতককে ফেরত নিতে পারেননি তারা। দাদি ও নানি যে অটোযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে পাঁচকমলাপুর গ্রামে পৌঁছান, সেই অটোচালক বিল্লাল হোসেন খোকাকে মারপিটও করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্তঃসত্ত্বাকালেই সন্তান বিক্রি করা পাষ- পিতা আশরাফুল ইসলাম আশিকুরের দেখা মিলছে না। সন্তান বিক্রি হয়ে যাওয়া মা শ্যামলী খাতুনকে বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের ইউনাইটেড ক্লিনিক থেকে বাপের বাড়ি দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ায় নেয়া হয়েছে। গত …. জুলাই ইউনাইটেড ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে শ্যামলী। তার জ্ঞান ফেরার আগেই সন্তান সরিয়ে নিয়ে তুলে দেয়া হয় আল্লার দান ফার্মেসির মালিক হুমায়ুন ও হাতিকাটার নান্নুর মাধ্যমে তাদের লোকজনের কাছে। ঘটনটি জানাজানি হলে হুমায়ুন ও নান্না কৌশলে চলাচল করতে থাকে। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে জানা যায়, ফার্মেসি মালিক হুমায়ুন ও হাতিকটার ন্নানুর মাধ্যমে হাতিকাটার মেয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুরের ওল্টুর স্ত্রী ফরিদা খাতুন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই নবজাতক কিনেছেন। অবশ্য দত্তক নেয়া হয়েছে মর্মে ভুল তথ্য দিয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নোটারি পাবলিক করে নেন ওল্টু।
পাঁচকমলাপুরের ওল্টুর নিঃসন্তান স্ত্রী ফরিদার কোলে রয়েছে শ্যামলীর ছেলে সন্তান এ তথ্য পাওয়ার পর গতপরশু বুধবার সকালের দিকে নবজাতকের দাদি সবেদা খাতুন কয়েকজনকে সাথে নিয়ে যান সেখানে। নবজাতককে দাদি সবেদা খাতুনের কোলে দেয়া হলে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। ছেলে ওল্টুর ছেলেকে তিনি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলে ফরিদা খাতুনসহ তাদের বাড়ির লোকজন বলেন, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। আরো অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ওইসব টাকা দিয়েই সন্তান ফিরিয়ে নিতে হবে। বিকেলে টাকা নিয়ে এসো, সন্তান দেয়া হবে। বিকিলে যখন সবেদা খাতুন চুয়াডাঙ্গা বেলগাছির অটোচালক বিল্লাল হোসেন খোকার অটোযোগে পাঁচকমলাপুরের ওই ওল্টুর বাড়ির দরজায় পৌছান, তখন তাদের লোকজন মারমুখি হয়ে ওঠেন। অটোচালক বিল্লাল হোসেন খোকাকে মারধর করা হয়। শূন্যহাতে সবেদ চুয়াডাঙ্গায় ফিরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ছুটে যান। তবে পুলিশ সুপারের না পেয়ে নালিশ করতে পারেননি। তিনি বলেছেন, পুত্রবধূ শ্যামলীকে সাথে নিয়ে মামলা করবো বলে জানাতেই ছেলে আশরাফুল ইসলাম আশিকুর মোবাইলফোনে নানা রকম হুমকি দিচ্ছে।
আশরাফুল ইসলাম আশিকুর উড়নচ-ি প্রকৃতির। কখনো অটোচালক, কখনো রঙ মিস্ত্রির কাজ করলেও মাঝে এক দফা শ্বশুরের গরু নিয়ে বিক্রিরও অভিযোগও ওঠে। স্ত্রী শ্যামলী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার তিন মাসের মাথায় সে তার স্ত্রীর গর্ভে থাকা সন্তান বিক্রি করে দেয়। স্ত্রীকে হুমকিধামকি দিয়ে সন্তান বিক্রিতে রাজি করায়। সন্তান প্রসবের দেড় সপ্তাহ আগে নোটারি পাবলিক করে ছেলে সন্তান দত্তক দেয়ার ঘোষণা দেয়। অথচ ওই নোটারি পাবলিকে দেয়া তথ্যের সাথে বাস্তবে রয়েছে চরম অসঙ্গতি। ভুল তথ্যে নোটারি পাবলিক করা নিয়েও যেমন প্রশ্ন, তেমনই সন্তান বিক্রির বিষয়টি বহুল আলোচিত হওয়ার পরও পুলিশের তরফে তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না দেখে সচেতনমহলে বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।