গাংনীতে এবার গাছে বেঁধে যুবকের বিয়ে

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামে সালিসের নামে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা রেশ কাটতে না কাটতেই গাছে বেঁধে এক যুবককে বিয়ে দেয়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। ভুক্তভোগী যুবকের নাম নজরুল ইসলাম (২০)। সে গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। গ্রামের পাশর্^বর্তী মথুরাপুর গ্রামের ৩২ বছর বয়সী এক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে তুলে গত ১ জুলাই বিয়ে দেয়া হয়েছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে ও নির্যাতনের ঘটনায় যুবক মামলা করতে চাইলেও বাধ সেঁধেছেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম কোরআনে হাফেজ। তিনি রামদেবপুর মালিপাড়া জামে মসজিদের ইমামতি করেন। ঘটনার বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর খালার বাড়িতে তার যাতায়াত ছিলো। নামাজ শেখানোর জন্য তিনি ওই বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। ১ জুলাই তিনি সেখানে অবস্থানকালে ওই নারীর পরিবারের লোকজন তাকে আটক করে। একপর্যায়ে ওই নারীর সাথে তাকে গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। তাকে মারধর করে বিয়েতে রাজি করানো হয়। একপর্যায়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। হাফেজ ই¯্রাফিল হোসেন বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন করেন। কিন্তু তাদের সংসার হয়নি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়ায় তিনি সংসার করবে না বলেও জানান। তবে নজরুল ইসলামের স্ত্রী ওই নারী বলেন, আমি অবিবাহিতা ছিলাম। বিয়ের প্রলোভনে নজরুল আমার সাথে সম্পর্ক করেছিলেন। তাই বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন আমি তার সাথে সংসার করতে চাই। বিয়ে কিংবা বিয়েতে বাধ্য করার সঙ্গত কারণ যাই হোক- গাছের সাথে বেঁধে রাখার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আমাদের সামাজিক বিচার ব্যবস্থা কি মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছে? আলোর যুগেও কি মধ্যযুগীয় বর্বরতা উৎসাহিত হচ্ছে। উন্নত পৃথিবী ও তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন বদলে যাওয়ার সময়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্রশাসনসহ সচেতন মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী নজরুলের সাথে কথা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ জুলাই একই ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের করমদী গ্রামে পরকীয়ার অভিযোগে সালিসের নামে গৃহবধূ ও এক যুবকের নির্যাতনের ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় গৃহবধূর পিতা বাদী হয়ে গাংনী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ, নিকাহ রেজিস্ট্রার সিহাব উদ্দীনসহ করমদী গ্রামের ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছে। আত্মগোপন করেছেন সালিসে জড়িত থাকা বেশ কয়েকজন।