চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় সরকারি হাসপাতালে হেল্প ডেস্ক

স্টাফ রিপোর্টার: চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ‘হেল্প ডেস্ক’ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে হেল্প ডেস্ক খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় জ্বরে আক্রান্তদের অনেকে চিকুনগুনিয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে কাতারালেও এ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। চিকুনগুনিয়া উপসর্গের রোগী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকেই চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গায় ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকালও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৮ জন নারী ও দুজন পুরুষ ভর্তি হয়েছেন। তবে এদের তেমন কেউ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত নন বলেই মন্তব্য করেছেন চিকিৎসক। রাজধানীসহ সারা দেশেই মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ার বিস্তার ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ‌‘হেল্প ডেক্স’ খোলার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধির ব্যাথা প্রশমনে প্রতিটি হাসপাতালে ‘জয়েন্ট পেইন ক্লিনিক’ বা ‘অর্থালজিয়া ক্লিনিক’ খোলার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এসব ক্লিনিক থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি বা ওষুধ গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হবে। দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতালে এই সেবা দেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।

গতপরশু রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরে এক জরুরি সভা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক, বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা পৌঁছে দেন আবুল কালাম আজাদ। এর আগে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ‘পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার’ বা চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য একটি সার্বক্ষণিক ‘হটলাইনও’ চালু রয়েছে। এর ফোন নম্বর হলো- ০১৯৩৭১১০০১১ ও ০১৯৩৭০০০০১১। এছাড়া চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সচেতন হওয়ার জন্য www.iedcr.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্যও সবাইকে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চলতি বর্ষা মরসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ হয়। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং রোগের লক্ষণ প্রায় একই রকম। এ ধরনের মশা সাধারণত ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যায় কামড়ায়। একটি পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে মশার মাধ্যমে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া হলে শরীরের গিটে গিটে ব্যথার পাশাপাশি মাথা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, চামড়ায় লালচে দানা, বমি বমি ভাব হতে পারে। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবন এবং চিকিৎসকেরপরামর্শছাড়া এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। ঘরের ভেতরে অর্ধস্বচ্ছ পানি, ফুলের টব, ফেলে রাখা কৌটা বা বোতল, পানির ট্যাংক, ছাদে জমে থাকা পানি, পরিত্যক্ত টায়ার, আবর্জনার স্তুপ বা ডাবের খোসার ভেতরেও জন্ম নিতে পারে এডিস মশা। তাই বাড়ির ভেতরে, বাড়ির ছাদে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।