দর্শনা শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময়সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান

এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও দর্শনাবাসীর কাক্সিক্ষত প্রাণের দাবি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর স্থাপন করা হবে
হারুন রাজু/হানিফ ম-ল: দর্শনা শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে দর্শনা অডিটেরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারে এ মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিসভা গ্রহণ করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে আভ্যন্তরীণ বিভাগের সিনিয়র সচিব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের আগমনে আয়োজন করা হয়। দর্শনা রেলবাজার, পুরাতন বাজার ও বাসস্ট্যান্ড দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সকাল থেকে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দর্শনাবাসীর প্রাণের দাবি পূরণে সভাস্থলে সমবেত হয়। দর্শনাবাসীর কাক্সিক্ষত দাবি ‘দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়ন করতে হবে করে দাও’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সভা চত্বর। সকাল থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রধান অতিথির মুখ থেকে প্রাণের দাবি পূরণের ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় ছিলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বেলা ১১টার দিকে গাড়িবহরযোগে পৌঁছান দর্শনায়। প্রথমে তিনি দর্শনা কাস্টমস সার্কেল পরিদর্শন করেন। কাস্টমস কর্মকতাদের সাথে সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে কাস্টমসের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় নজিবুর রহমানকে। সাড়ে ১১টার দিকে তিনি কেরুজ অতিথি ভবনে যান। সেখানে কেরুজ চিনিকলের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অতিথি ভবনে কেরুজ কর্মকর্তাদের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় শেষে নজিবুর রহমান পৌঁছান দর্শনা অডিটেরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারের সভামঞ্চে। এ মঞ্চে দর্শনা পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বরণ করে নেয়া হয় প্রধান অতিথি নজিবুর রহমানকে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সু-নিপুণ নির্দেশনায় দেশের সবকটি জেলা সম্ভাবনাময়ী এলাকা খুঁজে বের করে সেখানে সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে কর্মস্থানসহ সে জেলাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি কিভাবে বেগবান করা যায়, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দফায় দফায় বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সম্ভাবনাময়ী স্থানগুলো নির্ধারণ করে নতুনভাবে অর্থনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন কৌশলপত্র প্রণোনয়ন করতে হবে। জেনে খুশি হবেন, শেখ হাসিনার সানুগ্রহ নির্দেশনায় আমি প্রথম যে স্থানটি বেছে নিয়েছি, তা হচ্ছে আপনাদের স্বপ্নের শহর দর্শনা। দর্শনার প্রতি আমার বরাবরই ইতিবাচক ধারণা ছিলো, যা বাস্তবে রুপ নিলো আপনাদের শহরে পা রেখে। আমাকে অভিভুত করেছে এ শহরের খেটে খাওয়া মানুষ। আমি স্বীকার করছি আপনারা নিজেদের অধিকার নিতে জানেন। তবে অধিকার পাওয়ার মতোই শহর দর্শনা। এ শহরে স্থলবন্দর স্থাপনের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে আপনাদের প্রাণের দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি। দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হবেই হবে। এ বন্দর স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রতিবেদনে প্রথমেই থাকবে দর্শনা স্থলবন্দর স্থাপনের কথা। আমি সফর শেষে কাল-বিলম্ব না করেই প্রতিবেদন দাখিল করবো। সেই সাথে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে ইনশাল্লাহ। কমিশনার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস নীতি) লুতফর রহমান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব আমিনুল বর চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের মহাপরিচালক বেলাল উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, দর্শনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শহিদুল ইসলাম, স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লুতফর রহমান, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর ও দর্শনা শুল্ক স্টেশনের তত্ত্বাবধানকারী যুগ্মকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।
শিলা রাণী দাসের উপস্থাপনায় উপস্থিত ছিলেন- কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কলিমুদ্দীন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, শাহ এনামুল করিম ইনু, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, গোলাম ফারুক আরিফ, আতিয়ার রহমান হাবু, কবি আবু সুফিয়ান, কেরুজ শ্রমিক নেতা তৈয়ব আলী, মাসুদুর রহমান, মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ, ফারুক আহম্মেদ প্রমুখ। সভায় দর্শনা পৌরবাসীর পক্ষ থেকে নজিবুর রহমানের হাতে ৩ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট লিখিত দাবিনামা পেশ করেন স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান।
লিখিত দাবিনামার মধ্যে উল্লেখ্য করা হয়- দর্শনা ভৌগলিকভাবে সীমানা খুব দীর্ঘ না হলেও ইতিহাস, ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভূখ- গঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই অত্যান্ত সমৃদ্ধ একটি শহর। ১৯৩৮ সালে এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তর ও দেশের সর্ববৃহত চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি দর্শনায় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভীত আরও মজবুত হয়। দর্শনায় কাস্টমস স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে। পরপরই ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশের ভূখ-ে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে ‘দর্শনা জংশন’ দেশের বুকে আলাদা একটা মহিমা নিয়ে পরিচিতি লাভ করতে থাকে দর্শনা। দর্শনার সময়ের একমাত্র আন্তর্জাতিক রেলপথ যার মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পূর্বে ভারতের সাথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় দর্শনা স্টেশন থেকে। বর্তমানে যা দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন নামে পরিচিত। দর্শনার সাংস্কৃতিক পরিচয় আজও দেশব্যাপী সমাদৃত। দর্শনার এক সময়ের প্রশাসনিক পরিচয় ছিলো ইউনিয়ন যা ১৯৯১ সালে পৌরসভায় রুপান্তরিত হয়। বর্তমানে দর্শনা পৌরসভা ‘বি ক্যাটাগরি’ মর্যাদাপ্রাপ্ত। রাজনৈতিকভাবেও দর্শনার অবস্থান বেশ মজবুত। দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর স্থাপনের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া দর্শনাবাসীর আরও একটি কাক্সিক্ষত দাবি দর্শনাকে উপজেলায় উন্নিতকরণ। সভা শেষে নজিবুর রহমান কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন ও জয়নগর চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন। দুপুরের পর তিনি ঐতিহাসিক মুজিবনগরে যান। সন্ধ্যার পর যশোরের উদ্দেশে গাড়িবহরযোগে রওনা হন।