অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা অবশ্যই অকল্যাণকর

তৃণমূূল পর্যায়ে একজন নীতিবান মানুষের জন্য সাংবাদিকতা সত্যিই বড্ড কঠিন। কতোটা ঝুঁকির তা দূর থেকে অনুমান করাও অনেক সময় অসম্ভব প্রায়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পরও দশে চক্রে ভগবান ভুতের মতো পরিস্থিতির শিকার হওয়ার উদাহরণও ভুরিভুরি। হুমকিধামকি যেমন লেগেই থাকে, তেমনই পুলিশেরও মাঠপর্যায়ের কোনো কোনো কর্তার কৌশলী আচরণ আরও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। না, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জামজামি প্রতিনিধি খন্দকার আব্দুল মান্নানের ক্ষেত্রে এখনও অতোটা হয়েছে তা বলা বোধ করি ঠিক হবে না। তবে মতলববাজদের ঘটনাচক্র দশেচক্রের রূপদানের অপচেষ্টা রুখতে সুষ্ঠু স্বচ্ছ তদন্তপূর্বক পুলিশের আশু পদক্ষেপে নিশ্চয় ন্যায়ই প্রতিষ্ঠা পাবে। বিবেকবানরা নিশ্চয় এটাই প্রত্যাশা করে।
অবশ্যই সমাজের প্রায় সকল মানুষ শান্তিকামী এবং ভালোমানুষ। হাতেগোনা কয়েকজনের কারণেই সমাজের শান্তিবিঘিœত হয়, সমাজের অগ্রযাত্রাও থমকে থেমে যায়। কারো কারো জীবনই শুধু বিপন্ন হয় না, খারাপের রোশানলে বহু সংসার, বহু পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায়। এরা সমাজের দৃষ্টিতে, আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। কারো কারো বিচার হয়, বিচারে শাস্তি হয়, এক অপরাধীর শাস্তি দেখে অন্য অনেক অপরাধী অন্যায়ের পথ পরিহার করে নিজেকে সুপথেও ফেরায়। সমাজের এই মতলববাজ, গুটি ব্যক্তি সংগঠতি হয়ে সমাজের বেশিরভাগ মানুষগুলোকেই জিম্মি করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দৃষ্টিগোচরসহ সমাজকে সুন্দরের পথে নিতে বা রাখতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে সংবাদপত্র। এই সংবাদপত্রের পাঠক যার দৃষ্টিতে ঘটনাপ্রবাহ অবলোকন করেন তিনিই সাংবাদিক। তথা একজন সাংবাদিকের বিচক্ষণতায় উঠে আশা দৃশ্যপটই মূলতঃ পত্রস্থ হয়। এক্ষেত্রে বলা যায়, একজন সাংবাদিক মূলত সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য উপস্থাপনের কারিগর। এই দায়িত্ব পালন করতে গেলে সমাজের ওই মতলবাজদের কাছে কি তিনি ভালো মানুষ খেতাব পাবেন? তবে এও অস্বীকার করার জো নেই যে, যারা সাংবাদিকতা করছেন তাদের সকলে স্বচ্ছ কিংবা কেউ অন্যায় করছেন না। সে কারণেই তো সুসষ্ঠু তদন্তের গুরুত্বারোপ। আর সেটা যদি হয় দূরে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তাকে দিয়ে তা হলে কথাই নেই।
জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা গ্রামে একটি বাড়ির টিনের চালে পক্ষকাল ধরে ইট নিক্ষেপের ঘটনা নিয়ে একের পর প্রতিবেশীর দোষারোপ করা নিয়ে যে ঘটনার সূত্রপাত তা শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকের ওপর হামলায় রূপ নিয়েছে। টিনের চালে ইটনিক্ষেপের অভিযোগ তুলে এক প্রতিবেশীর স্ত্রী কন্যাকে ধরে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনার স্থিরচিত্র পত্রপত্রিকায় প্রকাশের পর প্রথমে বলা হলো- ওটা সাংবাদিকদের তৈরি করা ছবি। এটা বলেও যখন পদস্থ কর্তাদের কড়া নির্দেশ মিললো তখন মামলা হলো। নির্যাতনের শিকার নারীর জবানবন্দিও নেয়া হলো। নির্যাতনকারীরা যখন আইনের মুখোমুখি তখন তারা হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। এ ঘটনাপ্রবাহের পর এখন কি অপেক্ষা করছে তা কে জানে? সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায়ের কোনো কোনো চক্র হিংসাত্মক হয়ে ওঠে তখন, যখন কারো না কারো মদদ পায়। যে মদদ রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের তরফে হতে পারে, সে মদদ স্থানকালপাত্র ভেদে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কোন কোন কমকর্তার তরফে দেয়ারও নজির মেলে। সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল মান্নানের ওপর হামলা কার বা কাদের মদদে? নাকি কারো মদদছাড়াই বিপথগামীদের হিং¯্রতা?
‘সাংবাদিক মানুষটা ভালো নয়, কিংবাা ‘মানুষটা খুব খারাপ’ এসব অপবাদ তারাই আওড়ায় যারা- ওই মানুষটার কারণে অন্যায় করতে বা অন্যায় আড়াল করতে পারেননি তারাই নয়কি? তা না হলে খারাপ মানুষের সুধরে সুপথে নেয়ার মতো আইনি পদক্ষেপ নেই কেন? নিজেদের বা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব থাকা দরকার। অপরাধমূলক ঘটনা আড়াল করার চেয়ে তার উৎস খুঁজে সঠিক দাওয়ায় দিতে না পারলে অপরাধীদের অপতৎপরাতা অসহনীয় হয়ে কালি মাখাবে সভ্যতার মুখে। ত্রুটি-বিচ্যুতি, সঙ্গতি-অসঙ্গতি তুলে ধরে সুন্দর সমাজ গঠনে যারা সহায়ক তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজের স্বার্থেই জরুরি।