গাংনীতে উচ্চস্বরে মাইকিং ॥ প্রচারণার ৫ সেট মাইক জব্দ

গাংনী প্রতিনিধি: মাইকিঙের উচ্চস্বরে অতিষ্ঠ মেহেরপুর গাংনী পৌরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। আইনের তোয়াক্কা না করে মাইকে উচ্চস্বরে প্রচারকালে গাংনী থানা গতকাল শনিবার পাখিভ্যানসহ ৫ সেট মাইক জব্দ করেছে। এর মধ্যদিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। নিয়ম মেনে মাইকিং করার বিষয়ে আজ রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আলোসভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
‘মাইকের শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ গাংনী পৌরবাসী ॥ কয়েক যুবকের প্রতিরোধ’ শিরোনামে গতকাল শনিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল সকালে গাংনী শহরে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চলছিলো। খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করে। অভিযানে কাশেম মাইকের ৫টি প্রচার ভ্যান ও মাইক জব্দ করে থানায় নেয়া হয়। দিনভর থানায় জব্দ থাকার পর রাতে মাইক মালিকের কাছে তা ফেরত দেয়া হয়। নিয়ম মেনেই মাইকে প্রচার কাজ চালাবেন বলে মুচলেকা দিয়েছেন কাশেম মাইকের স্বত্বাধিকারী।
এদিকে উচ্চস্বরে যত্রযত্র মাইক বাজানো বন্ধে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে আজ দুপুরে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান এক সভা আহ্বান করেছেন। ওই সভা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা জানিয়ে দেয়া হবে মাইক মালিক ও ডেকোরেশন মালিকদের কাছে। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে কেউ যদি উচ্চস্বরে মাইকে প্রচার-প্রচারণা চালায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারী করেছেন ইউএনও।
প্রঙ্গত, শব্দ দূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেল, রাতের জন্য সর্বত্র ১০ ডেসিবেলের কম। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। আইনানুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব জায়গায় মোটরগাড়ির হর্ন বাজানো ও মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এরপর ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকার জন্য এ শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দ-নীয় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বলা আছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজের ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহনে প্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ন ও মাইক বাজানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যবে না। এই বিধির আওতায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে ১০০ গজের ভেতরে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। আরও বলা হয়েছে, কোনো উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার বা কোনো যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনোভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।