আর কতোজন পুড়লে পরে সমাজ পাবে জাগ্রত বিবেক?

বিজ্ঞানের বদৌলতে একদিন বারুদের চেয়ে দাহ্য সহজলভ্য করে রান্নার জ্বালানিকে আরও সহজতর করে তুলবে। তবে সেক্ষেত্রেও অসতর্কতায় বড় ক্ষতির ঝুঁকিও নিশ্চয় বাড়বে। যেমনটি বেড়েছে গ্যাসের ক্ষেত্রে। এক সংগ্রামী মা তার সন্তানকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরে নতুন গ্যাসের চুলায় নতুন সিলিন্ডার যুক্ত করতে গিয়ে ভয়াবহ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আগুনে ঝলসে মা ও ছেলে দুজনই অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। লড়ছেন মৃত্যুর সাথে। প্রশ্ন উঠেছে, যে দোকান থেকে গ্যাসের চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডার নেয়া হয়েছে, সেই দোকানি কি ওই সংগ্রামী নারী এবং তার স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে সতর্ক করেছিলেন? দায় এড়াতে এখন হয়তো হ্যাঁ-ই বলবেন, কিন্তু তাতে কি বিপদমুক্ত হবে সমাজ? বাড়বে সচেতনতা?
চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ার রাজধানীপাড়ার খন্দকার নাসির উদ্দীন আহমেদ ছিলেন সংবাদপত্রের এজেন্ট। দু কন্যা ও এক ছেলে রেখে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। স্ত্রী হাবিবা সুলতানা স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যাবসা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সংসারের হাল ধরে দু কন্যাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি ছেলেকেও পড়াচ্ছিলেন তিনি। দু মেয়ে এখন দূরে থাকে, ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। রান্না-বান্নায় কাঠের চেয়ে গ্যাসই সাশ্রয়ী। এভেবেই তিনি তিল তিল করে গচ্ছিত অর্থ দিয়ে কিনলেন গ্যাসের নতুন চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার। বাড়ির রান্নাঘরে নিয়ে গ্যাসের চুলার সাথে সিলিন্ডার যুক্ত করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। হয় চুলায় বা সিলিন্ডারের পাইপের কোথাও ত্রুটি ছিলো, নয় একেবারেই বুঝতে পারেননি কোন পাইপ কোনটির সাথে কীভাবে যুক্ত করতে হবে। হয়তো সাশ্রয়ে ডাকেননি, নয়তো পাননি মিস্ত্রি। কখনো কখনো দক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে কাজ না করিয়ে সাশ্রয়ের খেসারত দিতে হয় অনেক। সেটাও অনেক সময়ই অসচেতনতা, অসতর্কতার কারণেও হয়। তাছাড়া যে রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়, সেই ঘরের জানালা বাধ্যতামূলকভাবেই খুলে রাখতে হয়। ভেনটিলেটারও রাখতে হয় বাতাস বের হওয়ার মতো। উঁচুর গরম বাতাস বের করে দেয়ার জন্য বিদ্যুতচালিত পাখা রাখতে পারলে আরও ভালো। ধুয়া নির্গত পাইপ বা চিমনি তো লাগেই। যদিও আমাদের গ্রামবাংলায় এসব ‘খাজনার চেয়ে বাজনা’ বেশির মতোই মনে হয়। তারপরও বিজ্ঞানের সুফল ভোগ করতে হলে বাড়তি সচেতনতা, বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন না করলে চোখের পলকেই সর্বনাশ ডেকে আনে। যেমনটি হয়েছে আন্দুলবাড়িয়ার রাজধানীপাড়ার সংগ্রামী নারী হাবিবা সুলতানার রান্নাঘরে। আগুন জ্বালতেই দুপ করে পুরো রান্নাঘরই ভরে ওঠে আগুনের গোলায়। মা ও ছেলে দুজনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখন মৃত্যুশয্যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হোক, এ প্রত্যাশা আমাদের।
এমন এক সমাজে বাস করি আমরা যে সমাজের রাস্তার ধারে বোতলে ভরে পাট্রোল-অকটেনের মতো দাহ্যপদার্থ খুচরা বিক্রি হয়। অথচ এটা আইনত দ-নীয় অপরাধ। একইভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের এজেন্টদের তেমন প্রশিক্ষণের দক্ষ করা হয় না। নতুন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীর কি করণীয় তা দেখিয়ে দেয়ার ন্যূনতম দায় যার বা যাদের মধ্যে নেই তার বা তাদের কি গ্যাসের মতো দাহ্যপদার্থ বিক্রির অনুমোদন দেয়া যায়? নিরাপদ পরিবার, সুশৃঙ্খল স্ন্দুর সমাজের জন্য দরকার যে যেখানে যে কাজে নিয়োজিত তাকে সেখানে নিজের কাজের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া। এমনিতেই দায়বদ্ধা সবার মাঝে আসে না। আনতে হয়, জাগাতে হয় বিবেক। আর কতোজন পুড়লে পরে সমাজ পাবে জাগ্রত বিবেক?