সাড়ে তিন মাসের শিশু আলিফের মৃতদেহ দাফনে এসে পিতাপক্ষের লোকজন খেলো পিটুনি

বিয়ের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতনের শিকার বৃষ্টি ॥ সন্তান হওয়ার পর মারপিটে বিগড়ে গেছে মাথা
স্টাফ রিপোর্টার: যে সন্তানের মাকে মেরে বিগড়ে দিয়েছে মস্তিষ্ক, সেই মায়ের সাড়ে তিন মাসের সন্তান আলিফের মৃত্যুর খবরে স্বামীপক্ষের লোকজন চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ায় এসে পিটুনির শিকার হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে শিশু আলিফ তার নানাবাড়ি ইসলাপাড়ায় মারা যায়। খবর পেয়ে দামুড়হুদার নতিপোতা থেকে পিতাপক্ষের লোকজন ইসলামপাাড়ায় ছুটে এসে শিশু আলিফের লাশ নেয়ার দাবি জানাতেই স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে মারপিট শুরু করে। বলে, যে স্বামীর নির্যাতনের কারণে শিশু সন্তানের মা এখন পাগল, সেই সন্তানের জন্য এখন এতো দরদ? মাছের মার মায়া কান্না? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ইসলাপাড়ার আশান আলীর মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের সাথে কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় দামুড়হুদার নতিপোতা গ্রামের ফুরাদ অলীর ছেলে স্বপনের সাথে। স্বামী স্বপন বিয়ের পর থেকেই বৃষ্টিকে মারধর করে। ফলে বৃষ্টি অধিকাংশ সময়ই তার পিতার বাড়িতেই থাকে। এর মাঝে অন্তঃসত্ত্বা হয়। বৃষ্টির কোলজুড়ে পুত্র সন্তান আসে। নাম রাখা হয় আলিফ। ওর বয়স যখন ১৪ দিন তখন বৃষ্টিকে সন্তানসহ নিয়ে যায়। এমন মার মারে যে, বৃষ্টির মাথা খারাপ হয়ে যায়। বৃষ্টির পিতাপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বৃষ্টিকে উদ্ধার করে। বাপের বাড়িতে নেয়া হয়। ইসলামপাড়ায় থাকাকালে গতকাল শিশু আলিফ মারা যায়। আলিফের নানা-নানিদের বক্তব্য, শিশু আলিফকে প্রথমে সুজি খাওয়ানো হয়, তার পর দুধ খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর মুখ দিয়ে দুধ তোলে। এরপরই গলায় বেধে মারা যায়।
স্থানীয়রা বলেছে, সাড়ে তিন মাসের শিশু আলিফ মারা গেলে তার পিতা স্বপনের বাড়িতে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় স্বপনের চাচাসহ একদল মানুষ আসে ইসলামপাড়ায়। তারা লাশ দাফনে শরিক হওয়ার বদলে যখন শিশুর লাশ নতিপোতায় নেয়ার জন্য বলে। একই সাথে শিশুর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন স্থানীয়দের মধ্যে পূর্বের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটে। তাদের ওপর মারপিট শুরু হয়। বৃষ্টির স্বামী স্বপনের এক চাচা রক্তাক্ত জখম হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
আলিফের মা বৃষ্টি খাতুন মানসিকভাবে এতোটাই অসুস্থ যে, গতরাতে যখন তার সাড়ে ৩ মাসের সন্তানের দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, তখনও বোঝেনি তার ছেলে আর বেঁচে নেই। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, ওই মেয়েকে যারা মেরে আহত করে পাগল করে দিয়েছে তাদের মুখে কি শিশু আলিফের লাশ নতিপোতায় নেয়ার কথা মানায়?