শিক্ষার মানবৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল উদ্যোগ সফল হোক

একজন শিক্ষক কি একজন চিকিৎসকের সাথে তুলনা করতে পারেন? সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের প্রাইভেট প্র্যাকটিস আর সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশনি সমাজের অসুস্থ প্রতিযোগিতারই কি অংশ নয়? অসঙ্গতি শুরুতে যতোটা বোঝা যায়, পরে অতোটা থাকে না, বরঞ্চ গাসাওয়া হয়ে একসময় মনে হয় এটাই তো সঙ্গত। সেটাই হয়েছে সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষকের ক্ষেত্রে।
কালক্রমে পঠন, পাঠনে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদেই পরিবর্তন। একসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেত্রাঘাত ছিলো আশির্বাদ। এখন? বেত নিয়ে দূরের কথা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম ভীতির কারণ হতে পারে এমন কিছু নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ বারণ। তাহলে শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণে বাধ্য করা হবে কীভাবে? গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা নয়, বাধ্য করার চেয়ে মনোযোগী করতে পারাই দক্ষতা। দক্ষ শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা এতোটাই মনোযোগী থাকে যে, সেখানে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। পারিবারিক আদরে বাদর হওয়ার কিছু বাদরামি যে থাকে না তাও বলা যায় না। ব্যতিক্রম কিছু তো থাকেই। ব্যতিক্রম কিছু শিক্ষকের কারণেই যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার সূত্রপাত তাও কি দায়িত্বশীলেরা অস্বীকার করতে পারবেন? শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা দিলে কি আলাদা কোচিং লাগে? তা যেমন লাগে না, তেমনই প্রাইভেট পড়ানোর দরকার হয় না। পিছিয়ে পড়াদের অজুহাতে বিদ্যালয়ে কোচিং যেমন সমর্থন করা যায় না, তেমনই একই ব্যক্তির একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনও মেনে নেয়া উচিত নয়। যেমন চুয়াডাঙ্গায় একজন শিক্ষক ক্যাডেট কোচিং খুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার কোচিং যেমন প্রশংসার দাবি রাখে, তেমনই ওই শিক্ষকেরও তো বিবেকের তাড়নায় নৈতিকতার তাগিদে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহত নেয়ার বিষয়টি বহু আগেই ভাবা উচিত ছিলো।
জিয়াউদ্দীন আহমেদ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তিনি প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দৃষ্টি দিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিচ্ছেন। সকলকে সাথে নিয়ে নিয়ম প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ইতোমধ্যেই প্রশংসার দাবি রাখতে শুরু করেছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলার ইটভাটা মালিকদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়ে সাফ সাফ বলে দিয়েছেন, প্রয়োজনে অনুমোদন সহজতর করা হবে, কিন্তু অনিয়ম কঠর হস্তে দমন করা হবে। আজ শনিবার তিনি চুয়াডাঙ্গার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ কিছু কোচিং প্রধানদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হবেন। ইতোমধ্যেই অংশগ্রহণকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিষয়টি জেনে শিক্ষানুরাগীমহলের অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অর্ধেকও নেই। শিক্ষক সংকটের মূল কারণ, নতুন শিক্ষকের চুয়াডাঙ্গায় পদায়ন করার পর তারা তদবির করে নিজ এলাকার বিদ্যালয়ে ফিরে যান। চুয়াডাঙ্গায় শূন্যতা থেকেই যায়। এর মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষক হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনকারী মেধা সঙ্কটের বিষয়টি। তাছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের পরিবেশে ঘাটতির কারণেই নিশ্চয় বাইরের কোচিঙে দিতে বাধ্য হন অনেক অভিভাবক। একেতো শিক্ষক সঙ্কট, তার ওপর বিদ্যালয়ে হরেক রকম ছুটিসহ নানান কারণে বছরে ৯০ দিন কি পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হয়?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় থাকা শুধু শিক্ষকম-লীর সুবিধাগুলো না নিয়ে, পরিপূর্ণভাবে যদি মেনে চলা হয় তাহলে তার সুফল নিশ্চয় শিক্ষার্থীদের ওপরই পড়বে। কিন্তু তা তো হবে না। হয় না। কাজির গরু কিতাবের মতোই বহু কিছুই থেকে যায় খাতা-কলমে। খেসারত শিক্ষার্থীদের তথা জাতির ভবিষ্যতের ওপরই পড়ে। জেলার শিক্ষার মানবৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল অনিয়ম বিতাড়িত করার প্রয়াস সফল হোক। স্বার্থক হোক।