আলমডাঙ্গায় হাসপাতাল স্থাপনে বগুড়ার নয়ন চন্দ্র? প্রশ্ন উঠতেই সামনে এসেছে প্রাইড সমিতি

বৈরী আবহাওয়ার কারণ দেখিয়ে পারলক্ষ্মীপুরের মেলা চালাতে অপারগতা প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার: বৈরী আবহাওয়ার কারণ দেখিয়ে আলমডাঙ্গার পারলক্ষীপুর গ্রামে চলা বোশেখি মেলা চালাতে অপারগতা লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বগুড়া জেলার গাবতলী থানার নয়ন চন্দ্র অধিকারী। গতকাল সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের কাছে তিনি এ আবেদন করেন। জেলা প্রশাসনসূত্র এটা নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, বগুড়া জেলার গাবতলী থানার নারায়ণ চন্দ্র অধিকারির ছেলে নয়ন চন্দ্র ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি জাফর আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চে প্রাইড সমবায় সমিতির পক্ষে আলমডাঙ্গায় বোশেখি মেলা চালানোর আবেদন করে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের আইজি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকসহ ১৯ জনকে বিবাদী করে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত মেলায় বিবাদীদের হস্তক্ষেপ কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না তা চলতি বছরের মে মাসের ২২ তারিখের আগে কৈফিয়ত চেয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল রুলনিশি জারি করেন। হাইকোর্টের আদেশে উল্লেখ করা হয়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রাইড সমবায় সমিতি কমিউনিটি হাসপাতাল, ট্রেনিং সেন্টার তৈরির লক্ষ্যে ভাড়াবাড়িতে বোশেখি মেলা, সার্কাস, হাউজি, র‌্যাফেল ড্র (ইনডোর গেমস) আয়োজন করতে চায়। এ ব্যাপারে সকল বিবাদীকে আগামী ৬ মাসের জন্য এ ব্যাপারে যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপ, বাদীকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। অতঃপর এই বর্ষায় (গত ২২ জুলাই ) শুরু হয় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের বোশেখি মেলা। মেলায় চালু হয় টিকটিকি (এক ধরনের জুয়া), হাউজি, র‌্যাফেল ড্রসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। যদিও এর সবগুলোই ইনডোর গেমের আওতায় পড়ে বলে দাবি করেছেন রিট পিটিশনার নয়ন চন্দ্র এবং মেলা পরিচালনাকারী শুকুর আলী। নয়ন চন্দ্র মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের এ ধরনের আদেশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০-১২টি মেলা পরিচালনা করেছেন। আদালতে যে সমবায় সমিতি হাসপাতাল তৈরি করার কথা বলে ফান্ড উন্নয়নে মেলা আয়োজনের যৌক্তিকতা দেখিয়েছে ওই সমবায় সমিতি অর্থাৎ আলমডাঙ্গার প্রাইড সমবায় সমিতি তাদের রেজিস্ট্রেশন সর্বশেষ নবায়ন করেছে ২০১৪ সালে। মেয়াদোত্তীর্ণ সমবায় সমিতির নামে কীভাবে মেলার অনুমোদন নেয়া হলো আর বগুড়ার নয়ন চন্দ্র কেনই বা আলমডাঙ্গায় এসে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিলেন? এসব জানতে ও তার সাথে পরিচিত হতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ গতকাল সোমবার দুপুরে তার কার্যালয়ে নয়ন চন্দ্রের সাথে বৈঠকে বসেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা বোশেখি মেলার স্থানীয় পরিচালক শুকুর আলী। বৈঠক শেষে হাইকোর্টে রিট পিটিশনকারি নয়ন চন্দ্র অধিকারি বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ মেলা চালানো সম্ভব নয় মর্মে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন জেলা প্রশাসককে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গড়াইটুপি মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে গত বছর বেশ জলঘোলা হয়। এবার অবশ্য সে মেলা ইজারাদারই পাওয়া যায়নি। অথচ পারলক্ষ্মীপুরে মেলা ৬ মাস ধরে চলবে বলে মৌখিক ঘোষণা শুনেই অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। এরপর যখন জানাজানি হয়, আলমডাঙ্গার একটি সমিতির নামে, আলমডাঙ্গায় হাসপাতাল স্থাপনসহ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বগুড়ার একজন উচ্চ আদালত থেকে মেলা চালানোর আদেশ নিয়ে এসেছেন, প্রায় সকলে যেন নীরব দর্শক হয়ে যান। মেলায় নানা নামের জুয়ার আসরে এলাকার সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে নানা অভিযোগ উত্থাপন করলেও উচ্চ আদালতের আদেশ বলে মেলার আয়োজন হওয়ায় সাংবাদিকদেরও প্রায় সকলে পর্যবেক্ষণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।