প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার চিত্র

চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নকল্পে ৩ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুধীজনদের সাথে মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাকে একটি মডেল জেলায় রূপান্তর করতে ৩ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ তথ্য জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ জানিয়ে বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই ওই পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় জেলার সুধীজনদের সাথে মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলা হয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টা অবশ্যই আমাদের সাফল্য এনে দেবে।

জেলা প্রশাসনের আহ্বানে অনুষ্ঠিতসভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আনজুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা জজকোর্টের বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. শামসুজ্জোহা, প্রাক্তন অধ্যক্ষ এসএম ইস্রাফিল, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর বেগমসহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জেলার উন্নয়নকল্পে প্রস্তাবিত ৩ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার বিষয়সমূহ উপস্থাপন করা হয়। প্রেজেন্টেশনের কাজে সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ফখরুল ইসলাম। প্রস্তাবিত ৩ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নতকরণ। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবক সমাবেশ ও রচনা/চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণ। জেলায় মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা/কার্যকরকরণ, গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি অলিমপিয়াডের আয়োজন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৪ হাজার আসন বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় পরীক্ষার হল নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ই-হাজিরা, প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ স্থান, পরীক্ষার হলে সিসিটিভি সংযোগ প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভেষজ ও ফলজ বৃক্ষরোপণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা, মেয়েদের জন্য পৃথক ওয়াশ কর্নার, মাদরাসাসমূহে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠ্যক্রম ইত্যাদির ডাটাবেজ তৈরি করা, প্রত্যেক উপজেলায় শিক্ষা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা (আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য), বিদ্যালয়গুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ভূমি অফিস অটোমেশন, ই-মোবাইল কোর্ট বাস্তবায়ন জোরদারকরণ, জেলা থেকে প্রদত্ত সকল লাইসেন্স প্রদান অটোমেশন, সরকারি দফতরে সিসিটিভি সংযোজন এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন করা। ভূমিসেবা সহজিকরণের মধ্যে রয়েছে- খাসজমির সকল রেজিস্টার সরেজমিন অবস্থান আলোকে হালনাগাদকরণ, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর রেকর্ডরুম তৈরি ও রেকর্ডরুমে রেকর্ডের যথাযথ সংরক্ষণ, দেওয়ানি মামলা ও এসএফ ডাটাবেজ তৈরিকরণ, ভূমি সেবা গ্রহিতাদের সন্তুষ্টি ও কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক প্রণোদনা ও জেলা ভূমি পদক প্রদান। আইন শৃঙ্খলা ও সুশাসনের মধ্যে রয়েছে- জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলকল্পে সচেতনতামূলক সভা/সমাবেশ/ প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণ, বাল্যবিয়ে রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে নিরাপদ সড়ক গঠনে কমিটি গঠন। উন্নয়ন প্রশাসনের মধ্যে রয়েছে- জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের হালনাগাদ ডাটাবেজ তৈরি, বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, প্রবীণ, তৃতীয় লিঙ্গ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনায়নের লক্ষ্যে ডাটাবেজ তৈরি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ইনডোর স্টেডিয়াম ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ, অব্যবহৃত জমির ডাটাবেজ তৈরি এবং জেলা ব্রান্ডিং ও জিআই পণ্যের নিবন্ধন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় মানবসম্পদ উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে- জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ, জেলা ও উপজেলায় অ্যাম্বুলেন্স ও জেনারেটর সুবিধা নিশ্চিতকরণ, গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি, পাখি ও মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা। বিবিধের মধ্যে রয়েছে- জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশ, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার উত্তম চর্চ অনুসরণ এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কালেক্টরেটের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান। এছাড়া উন্মুক্ত মতবিনিময়কালে প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বাদেও সভায় জেলার বিভিন্ন উন্নয়নের দিক সংক্রান্ত উপস্থিতিদের দেয়া প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করেন জেলা প্রশাসক যা প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মধ্যে সংযোজন করা হতে পারে। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মধ্যে কিছু কিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেমন আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের রাস্তাগুলো শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় ই-মিউটেশন চালু হয়েছে। বাল্যবিয়ে পূর্বের চেয়ে কমে এসেছে। এছাড়া চিত্রা নদী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে খনন, পৌর এলাকায় পাবলিক টয়লেট স্থাপনসহ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বিষয়ে উপস্থিতিদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে চুয়াডাঙ্গা একটি মডেল জেলায় রূপান্তরিত হবে বলে আশাবাদী জেলার শীর্ষ এই কর্মকর্তা। জেলার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসক।