হজ অব্যবস্থাপনার দায় এড়ানো যাবে না

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ। এ ইবাদত সুস্থ এবং সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য ফরজ। প্রতিবছর পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য সামর্থ্যবান ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা প্রস্তুতি নেন। সেই প্রস্তুতির সাথে জড়িয়ে আছে ভিসা, বিমান টিকিটসহ নানান অনুষঙ্গ। হজযাত্রীদের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি দেখভালো করে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি। সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রীরা হজব্রত পালনের জন্য সৌদিআরব যান। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এজেন্সির মাধ্যমেই হজের টাকা জমা দেন, এজেন্সিই ভিসা প্রাপ্তির বিষয়টি দেখভালো করে। বিমানের টিকিট থেকে শুরু করে হজব্রত পালনের সময়ের থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় তারাই দেখে। প্রতিবছরই হজযাত্রার শুরুতে কিছু না কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো ভিসা না হওয়া, বিমানের টিকিট না করাসহ নানান কারণে অনেকেই হজব্রত পালন করতে যেতে পারেন না। এক্ষেত্রে এজেন্সিগুলোর গাফিলতির অভিযোগ প্রচুর। তবে এবারে সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যভাবে।

২০১৫ এবং ২০১৬ সালে হজ করেছেন এমন ব্যক্তিদের ২০১৭ সালে হজ পালন করতে হলে ভিসা আবেদনপত্রের সাথে অতিরিক্ত ২ হাজার সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি ৪৫ হাজার টাকা) জমা দেয়ার নিয়ম করেছে সৌদি সরকার। এ টাকা যাদের জমা দেয়া নেই, তাদের ভিসা ইস্যু হয়নি। সৌদি সরকারের এ নিয়মের বেড়াজালে পড়ে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশির হজ পালনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর এ নিয়মের কারণেই হজ ভিসা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকার ২০১৭ সালের জন্য যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে, হজযাত্রীরা সে প্যাকেজ অনুযায়ী এজেন্সি মালিকদের কাছে হজের টাকা জমা দেন। এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে আমাদের ৬৩৫টি এজেন্সি। নিয়ম অনুযায়ী এজেন্সির মালিকরা হজযাত্রীর সৌদি আরবে বাড়িভাড়া, খাওয়া খরচ ও মোয়াল্লেম ফি বাবদ যে অর্থ লাগে তা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের (আইবিএএন) মাধ্যমে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেন। এরপর এজেন্সি মালিকরা তাদের হজযাত্রীর নামে ভিসার জন্য ই-হজ সিস্টেমে লজমেন্ট করেন। কিন্তু এবারে ভিসা ইস্যুর সময় দেখা যাচ্ছে একটি হজ এজেন্সি যতো হজযাত্রীর ভিসার জন্য লজমেন্ট করেছে, ততোজন হজযাত্রীর নামে ভিসা হয়নি। কারণ তারা গত দু বছরে হজব্রত পালন করেছেন এবং এবারের নিয়ম অনুযায়ী ভিসার জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়াল জমা দেননি। আর যেহেতু এজেন্সিগুলোর ভিসা চাহিদার বিপরীতে তাদের আইবিএএনে অতিরিক্ত অর্থ জমা নেই। ফলে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের হজ পালনকারীদের নামে ২০১৭ সালে হজ ভিসাও ইস্যু হচ্ছে না। ভিসা না হওয়ার কারণে এজেন্সি মালিকরা তাদের সব বিমানের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন না। এতে করে বাতিল হয়ে যাচ্ছে বিমানের নির্ধারিত ফ্লাইটও। আর সৌদি সরকারের এ নতুন নিয়মের ফাঁদে পড়ে ভিসা জটিলতার কারণে প্রায় ৪০ হাজার হজযাত্রীর হজযাত্রা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত যে ত্রুটি দেখা দিয়েছে এর দায় সংশ্লিস্ট মহল এড়াতে পারে না। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত হলেও ভিসা না পাওয়ায় হজযাত্রীদের পরিবহন করতে পারছে না। ভিসা জটিলতা ও যাত্রী সঙ্কটের কারণে গত পাঁচ দিনে বিমানের ১৫টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

২০১৭ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ বাংলাদেশি হজ পালনের জন্য সৌদিআরব যাবেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু হয়েছে। হজ অফিস ও এজেন্সি-সংশ্লিষ্টরা জানান, হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর বুধবার পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রীর ই-ভিসা যথাসময়ে প্রিন্ট হয়নি। এমন জটিলতা চলতে থাকলে, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। হজযাত্রার শুরুতেই যে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সৌদি সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত কোনো সমাধানে না এলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সে সাথে একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের কারণে শেষ মুহূর্তে হজযাত্রী পরিবহন নিয়েও সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। পবিত্র হজের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ধর্মীয় আবেগ। হজব্রত পালনের ইচ্ছা পোষণকারী ব্যক্তি দীর্ঘসময় ধরে প্রস্তুতি নেন। শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতির শেষ পর্বে এসে কারো হজব্রত পালনে বাধা তৈরি হলে, তা কষ্টের এবং বেদনার। হজব্রত পালনের ক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সামনে যে মানবসৃষ্ট বাধা তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে করে সুষ্ঠুভাবে হজব্রত পালনের জন্য বেরুনো মানুষগুলো তাদের প্রার্থনা সম্পন্ন করতে পারেন।