বিশ্বজিৎ হত্যায় শাকিল ও রাজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

স্টাফ রিপোর্টার: পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছর আগের আলোচিত এ মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হচ্ছেন— রফিকুল ইসলাম ওরফে চাপাতি শাকিল এবং রাজন তালকুদার। এছাড়া মাফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক ইমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন ও মীর মোহাম্মদ নুরে আলম লিমনের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেছিলেন, তারা হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন। পলাতক থাকা বাকি ১১ জনের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ফলে তাদের ক্ষেত্রে আগের সাজাই বহাল থাকছে। আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের রায়ের শুনানি করে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার এ রায় দেন। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়। আসামিরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মী হওয়ায় সরকারকে সে সময় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বর্তমানে ছাত্রনেতারা হলের রুম পর্যন্ত ভাড়া দেয়। তারা দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। রায়ে বলা হয়, এটা পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না হলেও আসামিদের সম্মিলিত হামলার ফলেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে গাফিলতির কারণে নিম্ন আদালতের দেয়া সাজা হাইকোর্টে এসে কমে গেছে। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে আঘাতের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তার সাথে আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষীদের বর্ণনার মিল পাননি আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিশ্বজিতের লাশের সুরতহাল করার ক্ষেত্রে সূত্রাপুর থানার এসআই জাহিদুল হকের দায়িত্বে অবহেলা ছিলো কি-না, তা তদন্ত করে আইজিপিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আর ময়নাতদন্ত করার ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. মাহফুজুর রহমানের কোনো গাফিলতি ছিলো কি-না, তা তদন্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ডেন্টাল কাউন্সিলকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। এই আদেশ ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে মানবাধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবী মনজিল মোরসেদকে সময়ে সময়ে আদালতে জানাতে বলা হয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত তারা পূর্ণাঙ্গ রায় দেখার পর নেবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পলাতক যে ১১ আসামির বিষয়ে হাইকোর্ট রায়ে কোনো মন্তব্য করেননি, গ্রেফতার হলে বা আত্মসমর্পণ করলে তাদের বিষয়ে পরবর্তী বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ওই হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ওই রায় ঘোষণার এক সপ্তার মধ্যে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। নিম্ন আদালতের আদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- এএইচএম কিবরিয়া, ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, মোশাররফ হোসেন ও কামরুল হাসান। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়। ১৭ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান এবং আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শাহ আলম। ১৬ মে বিশ্বজিত দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিত হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। নিহত বিশ্বজিত শাঁখারীবাজারের একটি টেইলার্সে দর্জির কাজ করতেন। লক্ষ্মীবাজারে থাকলেও বিশ্বজিতের গ্রামের বাড়ি ছিলো শরীয়তপুরে।