শিশুর মৃতদেহের গলা ও মুখের দগদগে দাগই দেবে ঘাতকের সন্ধান

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাড়ির সকলেই যখন বিদ্যুতস্পৃষ্টে মারা গেছে বলে দাবি করছিলো, তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে ছিলো কানাঘোঁষা। তাতেই মেতে ওঠে পুলিশ। তার আগে পুলিশও শিশু রিয়াজের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের পক্ষে মত দেয়ার কথাই ভাবছিলো। বিদ্যুতস্পৃষ্টে নয়, শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মেই ময়নাতদন্তে প্রমাণ মিলেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানার এসঅই একরামুল হুসাইন।

বিদ্যুতস্পৃষ্টে মারা যায়নি, বাড়ির লোকজন তেমন কাউকে দেখেনি। শিশু রিয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয় নিজেদের ঘরের ভেতরের বাঁশের মাচার পাশ থেকে। পিতা-মাতা কেউ কারোর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ যেমন করেননি, তেমনই তারা ঘটনাটি হত্যা বলেই মানতে নারাজ। তাহলে কি পরিবারেরই কেউ হত্যা করে লাশ ঘরের ভেতরের মাচার পাশে রেখে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে বলে চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে? নাকি হত্যাকারী প্রভাবশালী হওয়ায় শিশু রিয়াজের মা জোসনা খাতুন ও পিতা শাবান আলী মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না? পুলিশ অবশ্য এখনও এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে তেমন গুরুত্ব দিতে শুরু করেনি। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। কবে নাগাদ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের হাতে পৌঁছুতে পারে? সূত্র বলেছে, প্রতিবেদন প্রস্তুত। শিগরিই পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে।  জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাসকররার তিয়রবিলা গ্রামের কুঠিরপাড়ার শাবান আলী একজন পাখিভ্যানচালক। শিশু রিয়াজ ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। গত ২২ জুলাই সকালে নিজেদের ঘরের ভেতরের বাঁশের কাবারির চৌকি হিসেবে ব্যবহার করা মাচার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। মা জোসনা খাতুনের দাবি, ছেলের গায়ে ছিলো বিদ্যুতের তার জড়ানো। অথচ তিনি তার ছেলের লাশ নিজেই প্রথমে দেখে জড়িয়ে ধরেন বলে জানান। তাহলে তিনি কেন বিদ্যুতায়িত হলেন না? সন্তোষজনক জবাব মেলেনি। শিশু রিয়াজের লাশ উদ্ধারের পর বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে বলে দাবি তুলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিবেশীদের কানাঘোঁষা আার শিশু রিয়াজের গলায় থাকা দাগের কারণে পুলিশের সন্দেহ ঘনীভূত হয়। ফলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।  প্রতিবেশীরা বলেছে, শিশু রিয়াজ ভ্যানচালক শাবান আলীর তৃতীয় স্ত্রীর ছেলে। প্রথম স্ত্রী বিয়ের তিন দিনের মাথায় বাপের বাড়ি ফিরে যান। দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সাত বছরের শিশুসন্তান মিরাজকে রেখে মারা গেলে শাবান আলী তৃতীয় বিয়ে করে। এই তৃতীয় স্ত্রী জোসনা খাতুনেরই ছেলে রিয়াজ। মিরাজ সম্প্রতি কাজের সুবাদে সরোজগঞ্জে থাকে। রিয়াজ ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। তার ছোট ভাই মিরাজের বয়স ৫ বছর। তাকে নিয়ে ঘটনার পূর্বরাতে পাশের বিলে পিতার সাথে মাছ ধরে। ভোরে বাড়ি ফেরে বলে দাবি করে যেসব তথ্য দিয়েছে তাতে সন্দেহ বাড়লেও বাড়ির বড়দের কেউ কেউ বলেছে, রিয়াজের বড় ভাই মিরাজ বিদ্যুতমিস্ত্রি। রিয়াজও বিদ্যুতের তার নিয়ে এটা-ওটা করতো। ওইসব করতে গিয়েই মারা গিয়ে থাকতে পারে। তাহলে গলায় ও মুখে শ্বাসরোধের দগদগে দাগ এলো কোথা থেকে? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সুষ্ঠু স্বচ্ছ তদন্ত হলে নিশ্চয় মিলবে ঘাতের পরিচয়।