আলমডাঙ্গা উপজেলা পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে ডিডি খরচের হিসেব দেখিয়ে অবৈধভাবে অতিরিকত টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ : তদন্তের দাবি

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলা পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ডিডি খরচের হিসেব দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার শতকরা প্রায় ১২ ভাগ হলেও ব্যাংক আমানতের গড় সুদ শতকরা ৫ ভাগ। এমন পরিস্থিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সাধারণত দরিদ্র ও মধ্যবৃত্ত শ্রেণির মানুষ পোস্ট অফিসের সঞ্চয়পত্র কিনতে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এখানেও গত কয়েক মাসে রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, এই সুযোগটিই আলমডাঙ্গা উপজেলা পোস্টমাস্টার গ্রহণ করছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আলমডাঙ্গা পোস্টমাস্টার অদ্ভুত নিয়ম চালু করেছেন। সে সময় পোস্টমাস্টার ছিলেন আশরাফ উদ্দীন। তিনি সঞ্চয়পত্রের টাকা জমা নেয়ার সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিডি খরচ আদায় করতেন। তিনি বদলি হলে গত মাসে একই পদে যোগদান করেন আবুল কাশেম। তিনিও ডিডি খরচ বা অর্থ প্রেরণ বাবদ নিয়মবহির্ভূতভাবে একই হারে অর্থাৎ লাখে ১১৫ টাকা করে আদায় করে ছাড়ছেন।

সংশ্লিষ্ট অফিসসূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাসে আলমডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক শাখায় পোস্ট অফিস মাত্র ৩-৪টি ডিডি করেছে। অথচ ৬ মাসে পোস্ট অফিসে বহু সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, যারা সচেতন গ্রাহক তাদের নিকট থেকে ডিডির নামে টাকা আদায়কালে প্রায় পোস্টমাস্টার আবুল কাশেম বিতর্কেয় জড়িয়ে পড়েন। তার এমন কর্মকাণ্ডে অফিসের সকলেই লজ্জায় পড়েন। বিব্রত অবস্থায় পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংকার জানান, তিনি নিজেই বেশি মুনাফার জন্য পোস্ট অফিসের সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ওই টাকা উত্তোলন না করে কিছুদিন আগে নতুন করে সঞ্চয়পত্র কেনেন। শুধু আগের সঞ্চয় হিসেবের টাকা নতুন সঞ্চয়পত্রের হিসেবে স্থানান্তরিত হবে। সেক্ষেত্রেও পোস্ট মাস্টার আবুল কাশেম ডিডি খরচ বাবদ টাকা আদায় করে ছেড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক জানান, পোস্ট মাস্টার আবুল কাশেম যে অবৈধভাবে ডিডি খরচের অজুহাত তুলে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেন সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন। বুঝেই তিনি অনলাইনে বিনিয়োগের অর্থ প্রেরণ করতে চাইলেও পোস্ট মাস্টার রাজি হননি। ভুক্তভোগী ব্যাংকার বলেন, তিনি সাধারণ গ্রাহক নন, ব্যাংক কর্মকর্তা। ডিডি বাবদ অর্থ আদায় যে অবৈধ সেটা তিনি বার বার উল্লেখ করলেও নির্লজ্জের মতো পোস্ট মাস্টার তার নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ছেড়েছেন বলে অভিযোগ করেন। আলমডাঙ্গা পোস্ট অফিসে গিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে ইচ্ছুক এমন অনেকের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ডিডি খরচের অজুহাত তুলে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে আলমডাঙ্গা উপজেলা পোস্টমাস্টারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেননি। বলেছেন তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন। এটা নিয়মবহির্ভূত নয়। বিনিয়োগকারীর নিকট থেকে ডিডি খরচ আদায়ের কোনো প্রজ্ঞাপন আছে কি-না তা দেখাতে বললে তিনি তাতে সম্মত হননি। এমনকি আজ (গতকাল) কয়টা ডিডি করেছেন? এমন সাধারণ তথ্য প্রদান করতেও অস্বীকার করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেন বলেন, সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষেরা তাদের সঞ্চিত টাকা নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের মতো কোনো জায়গা না পেয়ে একান্ত ঠেকায় পড়ে পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর এই পোস্ট মাস্টার তাদের অসায়ত্বকে জিম্মি করে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। ডাকবিভাগ কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে যথাযথ তদন্তপূর্বক অসৎ পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভুক্তভোগীদের।