প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ দ্রুত নিশ্চিত করবে

দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বন্যার লক্ষণ এবং বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞদের এ আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষকদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন সম্ভব, এমনটি ধারণা করা হলেও, বন্যার লক্ষণ দেখে তাও অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে দেশ দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে, বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কা অত্যন্ত উদ্বেগের। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ত্রাণ সরবরাহের দাবি করা হলেও আমরা বলতে চাই, দেশে দুস্থদের জন্য এ ত্রাণ নিয়েও চরম দুর্নীতি হয়। ত্রাণের সামগ্রী সঠিক জায়গায় পৌঁছে না- অতীত পর্যালোচনায় এ অভিযোগ অস্বীকার করা যাবে না। আবার বন্যার সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ হলেও দেখা যায়, এগুলো বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে স্থায়ী প্রভাব রাখতে ব্যর্থ হয়। গবাদিপশু ও ঘরবাড়ি হারানো মানুষের কাছে যতোটা সম্ভব আর্থিক সহায়তার হাত প্রসারিত করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের বহু বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য সংকটের আশঙ্কার বিষয়টিও বহুল আলোচিত। এ প্রেক্ষাপটে বন্যাকে স্থায়ীভাবে জয় করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। কেবল বন্যা দেখা দিলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে, এ অবস্থান থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।

গণমাধ্যমের তথ্য মতে, সরকারি গুদামে মাত্র আড়াই লাখ টনের মতো খাদ্য মজুদ রয়েছে। অথচ ১০ থেকে ১২ লাখ টন মজুদ থাকা দরকার আপদকালীন সময়ের জন্য। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ১০ আগস্টের তথ্য মতে, সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ চার লাখ ৩৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার টন এবং গম রয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার টন। এ ছাড়া বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে ৮৩ হাজার টন খাদ্যশস্য। খাদ্য মজুদের এ অবস্থায় আমনের চারা লাগানোর সময় দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলো। আরো আশঙ্কার যে, উত্তরাঞ্চল ছাড়িয়ে বন্যা এখন মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে বন্যার শেষ নাগাদ যে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ আরও বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সরকারিভাবে ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম বিদেশ থেকে আমদানির যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা ইতিবাচক। বলাই বাহুল্য, দেশের খাদ্য চাহিদার বেশিরভাগ অংশ পূরণ করে যেসব জেলা সেগুলোই বর্তমানে বন্যার কবলে। ফলে বন্যা না হওয়া জেলায় উৎপাদিত খাদ্যশস্য যে দেশের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে তাও স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সঙ্গত কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া জরুরি খাদ্যের মজুদ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর খাদ্য উৎপাদন করা যায় কি-না সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে রাখা। খাদ্য ছাড়াও পানি চলে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা উচিত। তাছাড়া বন্যা-পরবর্তী সংস্কার ও পুনর্বাসনের ব্যাপারেও এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত করবে এটা বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্টদের যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তেমনিভাবে নদ-নদীগুলোর নাব্য বাড়ানো, দখল হওয়া খাল-নদী পুনরুদ্ধার ও খনন এবং আন্তর্জাতিক নদ-নদীগুলোর ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ মুহূর্তে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী খাদ্য সংকটের যে আশঙ্কার কথা বিশেষজ্ঞ আলোচনায় উঠে এসেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ দ্রুততার সাথেই নিশ্চিত করবে।