ফায়ারিং স্কোয়াডে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা : ১৭ বছর পর রায়

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার একটিতে দোষী সাব্যস্ত করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) দশ জঙ্গিকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়েছে। আরেক মামলায় ৯ জঙ্গির ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রোববার ঢাকার ২ নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হুজির সদস্য ১০ জঙ্গির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলি চালিয়ে দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয়েছে। অপর চারজনকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১০ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনের এ দুই মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য একটি মামলায়। এ কারণে তার নাম এ মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৯ জনকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ মামলায় চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে কারাগারে থাকা সকল আসামিকে গতকাল আদালতে আনা হয়। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয় আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বলেন, আদালত ফায়ারিং স্কোয়াডে দণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন। এই দণ্ড হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে।

যারা দণ্ডিত: ১৭ বছর আগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার কাছে বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা হলেন ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান খান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা আ. রউফ ওরফে মুফতি আ. রউফ ওরফে আ. রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর। চৌদ্দ বছর সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মেহেদী হাসান, আনিসুল ইসলাম, মহিবুল্লাহ ও সারোয়ার। খালাস পেয়েছেন খন্দকার মো. কালাম উদ্দিন শাকের, আরিফ হাসান সুমন, মুন্সি ইব্রাহিম, শাহনেওয়াজ, লোকমান, এনামুল হক, মিজানুর রহমান, মাওলানা সাব্বির, মাহমুদ আজহার ও আবুল হোসেন। বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ইউসুফ ওরফে মোসহাব ওরফে আবু মুসা (পলাতক), আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মেহদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশিদ, রাশিদ ড্রাইভার ওরফে মো. আবুল কালাম ওরফে শিমন খান, শাহনেওয়াজ ওরফে মো.আজিজুল হক ও শেখ মো. এনামুল হক (পলাতক)। বেকসুর খালাস পেয়েছেন হাসমত আলী কাজী, আবুল হোসেন খোকন, মুন্সী ইব্রাহিম ও লোকমান।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত ৮৩ জনের মধ্যে ৬৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান আদালতে চার্জশিট দেন। সেখানে ১৬ জনকে আসামি করা হয়। পুনঃ তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ২৯ জুন নতুন করে ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। গোপালগঞ্জের আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের আগে সেখানকার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৪১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে গুরুত্ব বিবেচনায় মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা দুটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

২০০০ সালের ২২ জুলাই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া সফর উপলক্ষে কোটালীপাড়ায় শেখ লুত্ফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় একটি শক্তিশালী বোমা পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের বোমাটি উদ্ধার করে। পরদিন ২৩ জুলাই ৪০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। সেদিনই কোটালীপাড়া থানার এসআই নূর হোসেন একটি মামলা করেন।

অন্যদিকে, ২০০০ সালের ২৫ জুলাই গোপালগঞ্জের বিসিক এলাকায় মুফতি আবদুল হান্নানের সোনারবাংলা নামে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামক সাবান কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশ।