দোষারোপ নয়, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

মজুদদাররা চালের দাম বাড়াচ্ছে, সহযোগিতায় সাংবাদিকরা? সরকারের যেকোনো দায়িত্বে থেকে এ উক্তি দোষারোপ ছাড়া কি অন্য কিছু? যখন খাদ্যমন্ত্রী স্বয়ং এ অভিযোগ তোলেন তখন বুঝতে বাকি থাকে না, আড়ালে আগাম পদক্ষেপে ব্যর্থতা রয়েছে। সকল ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে হবে, নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে চালের বাজার। যেভাবে চালের দাম বাড়ছে, বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে তা কল্যাণ বয়ে আনবে না। অবিলম্বের প্রতিকার না হলে অচিরেই চালের বাজার সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কা সত্যি হলে পরিস্থিতি কতোটা ভয়ানক হবে তা ভাবলেই তো গা শিউরে ওঠছে। কেননা, এখনই চালের যে দাম তা স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে।
গত এপ্রিলে হাওরে বন্যার পর সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। এরপর কয়েক দফায় সারাদেশই বন্যার কবলে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। এসবের সাথে যুক্ত হয় ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের প্রধান ফসল বোরো। প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয় আউশ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠে থাকা আমনও। বন্যা ও অন্যান্য কারণে এবার ১০ লাখ টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ দিতে গিয়ে সরকারের চালের ভা-ারেও টান পড়ে। মজুদ নেমে আসে এক লাখ টনের নিচে। নাজুক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার চালের বেসরকারি আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনার পর বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়তে থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেসরকারি পর্যায়ে দেশে চাল এসেছে প্রায় পাঁচ লাখ ২০ হাজার টন। আরো ১৭ লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। কিন্তু এরপরও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, মিলাররা চাল আটকে রেখে দিচ্ছেন, চাহিদামতো সরবরাহ করছেন না। বাজারে নানা রকম গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার জন্য মিল মালিকদের দায়ী করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এক শ্রেণির মিলমালিক ও ব্যবসায়ী চাল নিয়ে চালবাজি করছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চাল নিয়ে দেশকে একটা বিভ্রাটের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। চালের মজুদ রেখে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।
চাহিদা অনুযায়ী আমদানির পরও বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, কোরবানির ঈদের পর গত দুই সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে ছয় থেকে সাত টাকা কোনো কোনো চালের ক্ষেত্রে আরও বেশি বেড়েছে। গুদাম বা বাড়িতে মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, ভারতে চালের রফতানি মূল্যবৃদ্ধির গুজব কি সত্যিই ছড়ানো হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে এর নেপথ্যে সরকারকে সংকটে ফেলার ষড়যন্ত্র নিহিত থাক অমূলক নয়। যা-ই হোক, বাজার নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু আমদানি করলেই হবে না, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, খোলাবাজারে চাল দুনীতিমুক্ত বিক্রিসহ নানাভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারার দায় দায়িত্বশীলদেরই।