চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতি নিয়ে দূর্দশা দূর হবে কবে?

সমস্যাটা পুরোনো, প্রতিকারের প্রত্যাশাও দীর্ঘদিন ধরে জিয়োন। আশা আছে বলেই তো মানুষ বাঁচে, ক্ষোভও হুটকরে উগ্রে দেয় না। কিন্তু সেই আশা যদি দিনের পর দিন দূর্দশায় পরিণত হয় তাহলে? ক্ষুব্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তারা সংগঠিত হলে তাদের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটতে পারে। অন্যথায় দুর্ভোগের শিকার মানুষগুলোকে নিয়তির ওপর দোষারোপ করে নিজের চুল নিজে ছিড়ে ক্ষোভ মাটি করা ছাড়া উপায় থাকে না। চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতি নিয়ে দুর্ভোগে সৃষ্ট ক্ষোভের প্রায় সবই মাটি হয় ওইভাবে। প্রসববেদনা দেখা দিলে প্রসূতির কষ্টই শুধু বাড়ে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রসূতির লোকজনের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দুর্ভোগের মাত্রা কতোটা তীব্র তা গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত ‘হাসপাতালে প্রসূতি ভর্তির পর পরিস্থিতিই পাঠায় ক্লিনিকে’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠে কিছুটা উপলব্ধি করা যায়। যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসার উদ্দেশে জেলা শহরে পৌঁছে সরকারি সদর হাসপাতালে ভর্তির পর যে করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে, তা পত্রস্থ হলেও কর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে কি-না বোঝা দায়। উত্থাপিত অভিযোগের তদন্তও এখন দুঃস্বপ্ন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সদর আধুনিক হাসপাতালটি জেলার স্বাস্থ্যসেবার সরকারি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। এ হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগ তো রয়েছেই, শহরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রও রয়েছে। এরপরও চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রসূতিকে নিয়ে ঘুরে ফিরে প্রায় অভিন্ন দুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠে কেন? চিকিৎসক সঙ্কট? সেটা কিছুটা থাকলেও নিয়ম না থাকাই মূলত দুর্ভোগের মূল কারণ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গাইনি কনসালটেন্ট আছেন, তাহলে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে প্রসূতি রোগী প্রসববেদনায় কাতরালেও সেবিকা ছাড়া চিকিৎসকের দেখা মেলে না কেন? কেন জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতাল এলাকাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা নার্সিঙে নিতে হয় কেন? কেনই বা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসূতি এবং নবজাতকের চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার পরও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি এখনও পর্যন্ত নির্ভশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠেনি? সব দোষ নন্দঘোষের মতো আমজনতার ওপর দিয়ে কিংবা কোনো অজুহাত খাড়া করে পার পাওয়া গেলেও প্রকৃত চিত্র যে ভিন্ন তা বলাই বাহুল্য। অবশ্যই মেধাবীরাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে লেখাপড়ার সুযোগ পান। সেবার ব্রত নিয়েই চাকরিতে যোগ দেন। এদের কাছে জাতি নির্ভেজাল সেবাটাই আশা করে। কেউ কেউ অতিবাণিজ্যিক হলেও অনেকের মধ্যেই সেবার মানসকিতার উদাহরণ মেলে। নিয়ম প্রতিষ্ঠায় উদাসীন হলে সেবার অবশিষ্ট মানসিকতা উবে যেতে কতোক্ষণ?
সরকারি প্রতিটি হাসপাতালে নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতালেরই কোয়ার্টারে থাকার কথা। কারণ জরুরি প্রয়োজনে যাতে দ্রুত তলবে পাওয়া যায়। বিশেষ করে প্রসূতির কখন প্রসববেদনা দেখা দেবে, কখন জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে তা আগাম বলা কঠিন বলেই গাইনি কনসালটেন্ট, অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ও সার্জিক্যাল কনসালটেন্টকে হাসপাতালের কাছে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই দৃশ্যটা অপ্রত্যাশিত। হাসপাতালে না পাওয়া গেলেও পাশের ক্লিনিকের তলবে অবশ্য পাওয়া যায়। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে না পাওয়া গেলেও পাশের ক্লিনিকে পাওয়াটা ঠিক কি বলা যায়? যাই বলা যাক, দুর্ভোগের শিকার মানুষগুলোর মধ্যে ক্ষোভ জন্মায়। জেলার স্বাস্থ্যকর্তা তথা সিভিল সার্জন বদলায়, ক্ষব্ধু মানুষগুলোর মধ্যে আশার আলো জ্বলে। এবার বোধ-হয় প্রতিকার মিলবে। প্রতিকার দুরাস্ত, দুর্ভোগের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলে। চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতি নিয়ে দীর্ঘদিনের দূর্দশাগ্রস্ততা দূর করে স্বস্তি ফেরাতে নবাগত সিভিল সার্জন নিশ্চয় বিশেষ উদ্যোগ নেবেন। এ আশা পূর্বের মতোই দূর্দশা রূপান্তর হলে বুঝতে হবে সত্যিই চুয়াডাঙ্গাবাসী অভাগা।