প্রসঙ্গঃ বিদ্যুত এবং চুয়াডাঙ্গার চরম বাস্তবতা

একদিন বিদ্যুতের চেয়ে সহজলভ্য শক্তি পাবে হয়তো মানুষ, তার আগে বিদ্যুতই যে সর্বেসর্বা তা অস্বীকার করবেন কীভাবে? বিদ্যুত শক্তি এখন শুধু কলকারখানার চাকাই ঘোরায় না, জনজীবনের পরতে পরতে অতিব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে না পারা মানে উপলব্ধি বোধই ভোতা হয়ে যাওয়া। চুয়াডাঙ্গায় চাহিদামতো বিদ্যুত দিতে না পরাটা কি উৎপাদনে ঘাটতির অংশ নয়? একেতো চাহিদামতো দিতে না পারা, তার ওপর বিশেষ বরাদ্দ নিতে না পারার পরিণতি ভোগ করছে চুয়াডাঙ্গাবাসী।
বিদ্যুত এমনই এক প্রকার শক্তি যা উৎপাদনে উদ্বৃত্ত বা উপচলে অপচয় হয়, ঘাটতিতে ব্যাহত হয় উন্নয়ন। প্রতিনিয়তই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। ফলে উৎপাদনও বাড়াতে হয়। যেহেতু বললাম আর বেড়ে গেলো এমনটি নয়, সেহেতু আগাম পদক্ষেপ নিতে হয়। আগাম পদক্ষেপ নিতে পারাটা শুধু সামর্থ্যের ওপরই নির্ভর করে না, দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতারও দরকার হয়। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুত উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চাহিদা পূরণের নানামুখি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে অল্পবিস্তর বিদ্যুত কেনাও হচ্ছে। এরপরও চাহিদা মেটাতে হিমশিম। একটু গরম পড়লে চাহিদার মাত্রা সামান্য বাড়লেই বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির নাজুক চিত্র ফুটে ওঠে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে এ যেন এক চেনা ছবি। ওজোপাডিকো’র চুয়াডাঙ্গা বিতরণ কেন্দ্রের সেই গতবাধা উক্তি, ‘যখন যেমন পাচ্ছি তখন তেমনভাবেই বিদ্যুত সরবাহ করছি। ওপরের নির্দেশ মতোই চলতে হয়, চলছি। যেখানে যেটুকু বিশেষ বরাদ্দ সেখানে সেটুকু দিচ্ছি। মাঝে মাঝে বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি হলে সাধ্যমতো দ্রুত মেরামতও করছি।’ এ অভিমত বিদ্যুত বিতরণ সংশ্লিষ্টদের মুখে মানালেও উন্নয়নকামী দায়িত্বশীলদের তা শুনে কি তুষ্ট থাকা উচিত? গ্রাহকরা অজুহাত নয়, চাহিদামতো বিদ্যুত চায়।
এমনিতেই চুয়াডাঙ্গায় প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান গড়ে তোলার মতো পরিবেশ না পেয়ে উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই নাকসিটকে মুখ ফেরায়। কেউ কেউ শিল্প গড়লেও তাদের অনেকেরই শিল্প বিদ্যুতের অভাবে হয় দেউলিয়া না হয় চাটিবাটি গুটিয়ে নিয়ে স্থানান্তর করেছে। এরপরও চুয়াডাঙ্গার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আগাম পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, হয় না। তা না হলে মেহেরপুরের কাছে শিখেও আমরা বিশেষ বরাদ্দ নিতে পারতাম, পারতাম প্রাপ্য হিস্যা আদায়ে সোচ্চার হতে। দায়িত্বশীলদের এদিকে একটু দৃষ্টি দেয়া দরকার বটে।