ঈদের নামাজকে কেন্দ্র করে হাঁপানিয়ার জয়নাল হত্যাকান্ডে ৩৭ জনকে আসামি করে অপরপক্ষের আদালতে মামলা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ঈদের নামাজকে কেন্দ্র করে আলমডাঙ্গার হাঁপানিয়া গ্রামে জয়নাল হত্যাকা-ে ৩৭ জনকে আসামি করে প্রতিপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর হাঁপানিয়া গ্রামের মৃত রফজেল ম-লের ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ মামলাটি আলমডাঙ্গা থানায় এফআইআর ভূক্ত করা হয়েছে।
ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈদের দিন হাঁপানিয়া গ্রামের ইমদাদুল মেম্বার ঈদগা মাঠে মুসল্লিদের উদ্দেশে ঈদগা ও মসজিদের আয়-ব্যয় নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন। সে সময় আসামিগণ ক্ষুদ্ধ হয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে তারা নামাজ না পড়ে ঈদগা ময়দান ত্যাগ করেন।কিন্তু বাদী ও বাদী পক্ষের লোকজন নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো। তারা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ারের বাড়ির পাশে পৌঁছুলে পূর্ব থেকে পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষরা বোমা, পিস্তল, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি, হকস্টিক, লোহার রড ইত্যাদিতে সজ্জিত হয়ে বাদীপক্ষের ওপর হামলা চালায়। ১ ও ২নং আসামি যথাক্রমে মন্টু ও দেলোয়ার বাদী রফিকুল ইসলামকে গালিগালাজ করেন। বাদীপক্ষ সে সময় গালি দিতে নিষেধ করলে দেলোয়ার খুন করার হুকুম দেয়। হুকুম পেয়ে ১নং আসামি মন্টু কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি ছোড়েন। তাতে ৩নং স্বাক্ষী রানার মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় ৪নং স্বাক্ষী জামাল হোসেন রানাকে বাঁচাতে গেলে ৫নং আসামি হাসানের হাতে থাকা রামদা দিয়ে জামালের মাথায় কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। এমন সময় ২নং স্বাক্ষী আব্দুল ওহাব জামালকে বাঁচাতে গেলে ৬নং আসামি মিলনের হাতে থাকা রামদা দিয়ে ২নং স্বাক্ষী আব্দুল ওহাবের মাথায় কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। ৭নং আসামি হাসিবুলও তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে ২নং সাক্ষীর ঘাড়ে কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। এমতাবস্থায় বাদী ২ নং আসামি দেলোয়ার তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে বাদীকে খুনের উদ্দেশে মাথায় কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। সে সময় ৫নং সাক্ষী আবু তাহের এগিয়ে গেলে ৮নং আসামি আনার তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে কোপ মেরে হাতের আঙুল কেটে দেয়। পুনরায় কোপ মারলে এবার আবু তাহেরের কব্জিতে লেগে হাড় কাটাসহ রক্তাক্ত জখম হন। অন্যান্য সকল আসামিগণ বাদীসহ ১নং থেকে ৫নং সাক্ষীদের এলোপাতাড়ি মারপিট করে মারাত্মকভাবে জখম করেন। এমতাবস্থায় পথ চলতি অন্যান্য সাক্ষীরা ছুটে গেলে ৩ ও ৪নং আসামি যথাক্রমে ঠা-ু ও খোকন তাদের ওপর পর পর ২টি বোমা নিক্ষেপ করেন। বোমা দুটি বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হলেও সাক্ষীরা বেঁচে যান। বোমার স্পিন্টারে অনেকেই আহত হন। বোমার শব্দে পুলিশের গাড়ি এলে গাড়ির শব্দ শুনে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। অন্যান্য সাক্ষীরা বাদী ও আঘাতপ্রাপ্ত সাক্ষীদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ও রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। সাক্ষী রানার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। চিকিৎসাজনিত কারণে ও আসামিদের দ্বারা মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে থাকায় মামলা করতে কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে। এ মামলার আসামিরা হলেন, হাঁপানিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইলের ছেলে মন্টু, দেলোয়ার, ঠা-ু ও খোকন, রসুলের ছেলে হাসান, রফিকুলের ছেলে মিলন, মনছের আলীর ছেলে হাসিবুল, ফজলুর ছেলে আনার ও সাইফ, খেজমত আলীর ছেলে রবিউল ও সিরাজ, সিরাজের ছেলে ফেরুজুল ও মিরাজুল, ইলিয়াসের ছেলে জামসেদ ও মজিবুল, কুদ্দুসের ছেলে মিজানুর ও জয়নাল, মিজানুরের ছেলে চয়েন, ময়জুদ্দীনের ছেলে মতিয়ার ও ইউনুস, আনুছদ্দীনের ছেলে ওসমান, আহাদ আলীর ছেলে সেলিম, ইবারতের ছেলে হায়দার ও বুদু, হায়দারের ছেলে ওলি, বুদুর ছেলে আসাদুজ্জামান, আইজালের ছেলে আজিজুল, মুনসুরের ছেলে কপিল, জলিলের ছেলে লুতফর, বজলুর ছেলে বেল্টু, ফজলুর ছেলে কামু, ইদ্রীসের ছেলে গফুর, আজহারের ছেলে হায়দার, দোয়াদের ছেলে সাত্তার, আজবের ছেলে শাহাবুল, কাতব্বরের ছেলে মিনারুল, খেজমতের ছেলে কায়েম আলীসহ আরও অজ্ঞাত ৮/১০ জন।
এ মামলার সাক্ষীরা হলেন ইউনুস আলীর ছেলে ইমতাদুল মেম্বার, মৃত ময়েজ উদ্দীনের ছেলে আব্দুল ওহাব, আরশাদ আলীর ছেলে রানা, গাফফার আলীর ছেলে জামাল, মৃত রফজেলের ছেলে আবু তাহের, রফজেলের ছেলে জিনারুল, ছিয়ামুদ্দীনের ছেলে লিটন, কুদ্দুসের ছেলে সেন্টু, হারেজের ছেলে রশিদ, দোয়াদের ছেলে দবির, মৃত মাবুদ আলীর ছেলে লুতফর, হাবিবুরের ছেলে রনি, ছোট ইসমাইলের ছেলে বোরহান ও রফজেলের ছেলে রফিক।
গত ২ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহার দিন আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামে ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের ২২-২৩ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।