আমি ব্যবসা করি, রাজনীতি নয় : আবদুর রশিদ

স্টাফ রিপোর্টার: চালের বাজার এখন লাগামহীন। দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। সরকারের দুই মন্ত্রীর অভিযোগ, মুনাফা লুটতে চালকলমালিকেরা পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর এই কারসাজির মূলে আছেন দেশের বৃহত্তম চালকল কুষ্টিয়ার রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টের মালিক আবদুর রশিদ। তার গুদামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানও চালিয়েছে।

কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবদুর রশিদ এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোক। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের হাত ধরে তিনি ও তার ভাই বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এখন হানিফের পেছনে পেছনেই হাঁটছেন তিনি। দলীয় কোনো পদে না থাকলেও আবদুর রশিদ এতোদিন বিএনপি সমর্থক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার ভাই সিদ্দিকুর রহমান কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, এখন সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আর সে কারণে চালের বাজারের অন্যতম এই নিয়ন্ত্রকের হঠাত আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া নিয়ে কুষ্টিয়ার নেতাকর্মীদের মনে সন্দেহ। সে সাথে চালের দামের লাগাতার বৃদ্ধি সে সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কারণ হিসেবে আবদুর রশিদ বলেন, ‘হানিফ সাহেবের হৃদ্যতা আকর্ষণীয়। যে সাধারণ মানুষের প‌েছনে থাকবে, আমরা তার প‌েছনে আছি। তবে আমি ব্যবসা করি, রাজনীতি নয়। বিএনপিরও কোনো পদে আমি ছিলাম না। আওয়ামী লীগেও না।’

জানতে চাইলে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তিনি ও তার ভাই দলে যোগ দিয়েছেন, সেটা ঠিক। তবে এজন্য বাড়তি কোনো সুবিধা তিনি পাননি। তার গুদামেও অভিযান হয়েছে। চালের দাম দফায় দফায় বাড়তে থাকায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, চাল নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দামে কারসাজি করছেন। এর আগে সোমবার কুষ্টিয়ায় আবদুর রশিদের মিলে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসন। এরপর শনিবার নাটোরে রশিদের মিলে আবার অভিযান হয়, আবারও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত রোববার তার কুষ্টিয়ার মিলে তদারকিমূলক অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে আজ খাদ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সে বৈঠকে আবদুর রশিদকেও থাকতে বলা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদুল আজহার পর কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে কমপ‌ক্ষে ৮ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারে যে মিনিকেট চাল আসে, তার বড় অংশ যায় কুষ্টিয়ার ৩১টি স্বয়ংক্রিয় বা অটো রাইস মিল থেকে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চালকলটির মালিক ওই আবদুর রশিদ। কুষ্টিয়া ও নাটোরে আবদুর রশিদের ৪টি অটো রাইস মিল আছে। এর পাশাপাশি আছে ১৫টি গুদাম। গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ৩ লাখ ৫৮ হাজার বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬৫ কেজি), যা প্রায় ২৫ হাজার টনের সমান। অবশ্য দু দফা অভিযানের পরও আবদুর রশিদের মিলে অবৈধ মজুতের প্রমাণ পায়নি জেলা প্রশাসন। চালের বস্তায় উৎপাদনের তারিখ লেখা না থাকায় তাকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গুদামে বাড়তি মজুতের অভিযোগ সম্পর্কে আবদুর রশিদ বলেন, ‘গুদামে অস্বাভাবিক মজুত থাকলে রশিদের গায়ে জামা থাকত না।’

এদিকে খাজানগর মোকামে চালের বাজার গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার স্থিতিশীল ছিলো। চালের কেনাবেচাও কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, আড়তদারদের কাছে প্রচুর চাল আছে। তারা আশঙ্কা করছেন, মিলমালিকদের মতো তাদের গুদামেও অভিযান হবে। এ কারণে তারা চাল কম ঢুকিয়ে গুদাম খালি করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। দেশজুড়ে বিভিন্ন মিলে অভিযানের কারণে কুষ্টিয়ার চালকলমালিকেরাও আতঙ্কিত। রোববার রাতে কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে যে আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করা হবে। এতে চালকল মালিক সমিতির স্থানীয় নেতাদের সবাই তাদের মুঠোফোন বন্ধ রাখেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চালকল মালিক সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, ফোন বন্ধ রাখার মতো একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো।