সেনাবাহিনীর সুরে কথা বললেন সু চি

মাথাভাঙ্গা মনিটর: রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ভাষণ দিয়েছেন মিয়ানমারের কার্যত সরকার প্রধান অং সান সু চি। তবে তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে একই সুরেই কথা বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইনবহির্ভূত কাজের নিন্দা করেছেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের’ অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই বলেননি। তিনি দাবি করেছেন, রাখাইনের অধিকাংশ মুসলিম পালিয়ে যায়নি এবং সহিংসতা বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ নয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের পর তারা মিয়ানমারে ফিরতে পারবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

গত ২৫ আগস্ট নতুন করে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর জাতির উদ্দেশ্যে এটাই ছিলো সু চি’র প্রথম ভাষণ। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম প্রাণভয়ে দেশটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চি নীরব থাকায় সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শেষ পর্যন্ত এই সংকট নিয়ে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বলেছেন, সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সু চির ভাষণ হবে তার জন্য ‘শেষ সুযোগ’। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র বিক্রিসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সু চি’র ভাষণ নিয়ে বিশ্বনেতাদের মাঝে প্রবল আগ্রহ ছিলো।

টেলিভিশন ভাষণে সু চি বলেন, বেশ কিছু মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে এ ধরনের খবর শুনে আমরা উদ্বিগ্ন। রাখাইন রাজ্য থেকে কেনো মুসলিমরা চলে যাচ্ছে সেটি খুঁজে বের করার জন্য তাদের সাথে কথা বলতে চাই। শরণার্থী হিসেবে যারা বাংলাদেশে গেছে যে কোনো সময় তাদের পরিচিতি যাচাই-বাছাই করে তাদের ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার। সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সব সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের সুরক্ষা দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার জন্য যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, সীমান্ত সুরক্ষায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় মিয়ানমার। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চাই।

মুসলমানদের সব বসতি ধ্বংস করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্ত হবে। যেসব লোক আইনের শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, ধর্ম-বর্ণ ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সু চি বলেন, কোনোরকম আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে ভীত নয় মিয়ানমার। রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ  জানিয়ে তিনি বলেন, রাখাইন অঞ্চলে সংঘাতের নিরসনের জন্য একটি টেকসই সমাধানের উপর জোর দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আনান কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ মেনে নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।