মেয়েটা কতোটাই না কষ্ট নিয়ে জগত ছেড়ে চলে গেলো

চিকিৎসার পথে পদে পদে বিলম্ব বলা কতোটা সঙ্গত তা নিয়ে তর্কের চেয়ে বড় প্রশ্ন- সর্প দংশনের শিকার কিশোরীকে বাঁচাতে না পারার দায় কার? সাপকে দোষারোপ মূর্খতা। যেহেতু বিলম্ব পদে পদে সেহেতু অনেকেরই দায়িত্ব অবহেলার নজির স্পষ্ট।
নিজেদের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা কিশোরী কন্যা যখন তার পিতা-মাতাকে বলেছে, কিছুতে কমছে, গা জ্বলে যাচ্ছে তখনও কি যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে? অভাবী পরিবারের পরিশ্রমী পিতা রাতে কন্যার আকুতিকে কতোটাই বা গুরুত্ব দিতে পারে? এটা ওটা বলে দায় এড়িয়ে ঘুরে ঘুমোনোটা যতোটা না অবহেলা, তার চেয়ে বেশি পরিশ্রমী শরীর রাতে এলে থাকা। তারপর রয়েছে অসচেতনতার অন্ধকার। ওঝা কবিরাজ হাতুড়ে ডাক্তার পেরোনোর পরই পৌঁছেছে হাসপাতালে। তারপর? নেই সাপের বিষ পানি করার ভ্যাকসিন। জেলার শীর্ষস্থানীয় সরকারি হাসপাতালে কেন এন্টি¯েœক ভেনম থাকে না? টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে বলাই দরিদ্র পিতাকে ছুটতে হয়েছে দিগগি¦ক। কিছু অর্থ জোগাড় করে এন্টি¯েœক ভেনম কিনে সেবিকার হাতে দিয়েছেন। সেবিকা চিকিৎসককে আসতে অনুরোধ করেছেন। চিকিৎসক এসেছেন। রোগীর শরীরে তা প্রয়োগ করেছেন। ততোক্ষণে রোগী ঢলে পড়তে শুরু করে মৃত্যুর কোলে। সমাজসেবা সহযোযগিতার হাত বাড়লেও তা কজে লাগেনি।
নিজের বা অন্যের ছোট বড় ক্ষয়-ক্ষতির পর একে অপরকে দোষারোপ করার হীনমানসিকতা লালন করার মানুষ সমাজে অহরহ। ফলে অন্যের ওপর দোষারোপের প্রবণতা সমাজে বিদ্যমান। এ অবস্থায় সর্পদংশনের শিকার চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নাজমা খাতুনের মৃত্যুর পর একে অপরকে দোষারোপ করাটা দোষের কিছু নয়। দোষ তখনই যখন দোষ ধরেও দায়ী ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল করার তেমন উদ্যোগ সমাজ গ্রহণ করে না। সর্প দংশনের পর তার পিতা-মাতার অবহেলা সত্যিই অমানবিক। যদিও কোনো পিতা-মাতাই তার সন্তানের প্রকৃতি অবস্থা বুঝে অতোটা উদাসীন হতে পারে না, হয় না। তারপরও কিশোরী নাজমা যখন বলেছে ‘সাপে কামড়েছে, শরীরে জ্বালাপোড়া করছে’ তখনও ঘুরে ঘোমানো কোনো জ্ঞানবান বাবার কাজ নয়। পিতা-মাতার অবহেলা, অসচেতনতায় কবিরাজের নিকট নিয়ে অপচিকিৎসার পর হাসপাতালে নিয়েও নানা সঙ্কটে তাকে সুস্থ করতে না পারা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র নয়। দায় এড়াতে পারে না সমাজ।
আহারে- মেয়েটা কতোটাই না কষ্ট নিয়ে জগত ছেড়ে চলে গেলো। কষ্টের কথা বলেও দ্রুত সহানুভূতি দূরাস্ত উল্টো ধমকেই বোধ হয় শুনতে হয়েছে তাকে। ক্ষমা করো তুমি, তোমাকে সুস্থ করতে না পারার কষ্ট নিশ্চয় আমাদের কুম্ভঘুম ভাঙাতে সহায়ক হবে। পুনশ্চঃ বাস্তবায়ন হোক সকলের সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার।