মানুষ পিটিয়ে হত্যার প্রকৃত কারণ উন্মোচন প্রয়োজন

ক্ষোভ ক্রোধ যতোই হোক, চোর সন্দেহে দূরের কথা হাতেনাতে কাউকে ধরে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারোর নেই। মানুষ হয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যার মধ্যে মেধাশক্তি নয়, পেশিশক্তিরই প্রকাশ পায়। সভ্যতার এতোদিন পরও কেন মানুষ পেশিশক্তি প্রয়োগে মেতে ওঠে, কেন মানুষ হত্যায় মত্ত হয়? তবে কি আইন, আইন প্রয়োগকারীদের ওপর আস্থাহীনতারই নগ্ন প্রকাশ? গরুচোর সন্দেহে একজনকে ধরে পিটিয়ে হত্যার পর সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন দানা বাধে। যদিও এরকম প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যায়। অনেক কিছুই অজ্ঞাতসারে দেশাচারে রূপান্তর হয়। পিটিয়ে মানুষ হত্যার প্রকৃত কারণ উন্মোচনপূর্বক প্রতিকারে প্রয়োজনীয় বাস্তবমুখি উদ্যোগ না নিলে ক্ষতিকর প্রবণতা পেয়ে বসা অমূলক নয়।
বেশ কিছুদিন ধরে গরুচোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে ডজনখানেক গরু চুরি হওয়ার পর শুধু গরুচুরি আতঙ্কই ছড়ায়নি, গরুপালনকারী কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিদের মধ্যে পুঞ্জিভূত হচ্ছিলো ক্ষোভ। ক’দিন আগে গরু চুরি করে শ্যালোইঞ্জিন চালিত দৈত্যরূপী লাটাহাম্বারে গরু তুলতে গিয়ে এক চোরের মোবাইলফোন পড়ে যায়। পরদিন সেই মোবাইলফোন উদ্ধার করে পুলিশে দেয়া হলেও পুলিশ চোর শনাক্তে দূরের কথা ন্যূনতম পদক্ষেপই নেয়নি। এতে পুলিশের ওপর ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুন। তারপরই যখন রামনগর ক্লাবপাড়ার এক ব্যক্তির গোয়াল থেকে দুটি বড় বড় গরু চুরি হয় তখন কেউ বসে থাকেননি। বহুমুখি তল্লাশির একপর্যায়ে একজন ধরা পড়ে। চুরি করা গরু দুটি ফেলে রেখে তিনজন পারিয়ে বাঁচে। ধরাপড়া ব্যক্তিকে গ্রামের মাঝে নিয়ে ক্ষুব্ধগ্রামবাসী শুরু করে জিজ্ঞাসাবাদ। গরু চুরির কথা স্বীকার করার পাশাপাশি সে তার সহযোগীর নামও প্রকাশ করে। চোর ধরে এ খবর পেয়ে দলিয়ারপুর ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলেও ধরাপড়া ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নিতে পারেনি বা নেয়নি। শূন্য হাতেই পুলিশ ফেরে। পুলিশের সামনেও মারধর হয়েছে বলে অভিযোগ। মারতে মারতে মারা গেলে সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেও কি পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার নজির মেলে না? পিটিয়ে মানুষ হত্যা কি তারই পরিণাম?
অবশ্যই পুলিশের সকল সদস্যই আস্থাহীনতার জন্য দায়ী নন, কেউ কেউ যে দায়ী তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। একের পর এক চুরি পরও পুলিশের তরফে তেমন তৎপরতা যেমন পরিলক্ষিত হয়নি বলে অভিযোগ, তেমনই চোরের মোবাইলফোন কুড়িয়ে পেয়ে তা পুলিশে দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এতে ক্ষোভের মাত্রা বৃদ্ধি যে অস্বাভাবিক নয়, তা দায়িত্বশীলদের উপলব্ধি করতে হবে। গরুপালন কতোটা কষ্টের, তাও আইন প্রণেতাদের উপলব্ধি করে শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। আইনের প্রতি সকলকে শ্রদ্ধাশীল করতে দরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সকল ব্যক্তির কর্তব্যপরায়ণতা। সমাজের সচেতন মানুষগুলোকেও সামাজিক দায়িত্বে এগিয়ে আসা দরকার।