ভারতীয় এক ছাত্রীকে জন্ম নিবন্ধন দিলেন গাংনীর কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ॥ ভোটার তালিকায়ও নাম অন্তর্ভুক্তি

মাজেদুল হক মানিক: ভারতীয় স্কুলছাত্রী রুকছার খাতুনকে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে কাজিপুর গ্রামের প্রবাস ফেরত রফিকুল ইসলামের সাথে ইতোমধ্যে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে স্কুলছাত্রী। শুধু তাই নয়, চলমান ভোটার তালিকা হাল নাগাদ কার্যক্রমে ভোটার নিবন্ধন করেছেন রুকছার। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইউপি চেয়ারম্যান রাহাতুল্লাহ ও তার ভাই স্কুল শিক্ষক সাহাব উদ্দীন জন্ম নিবন্ধন করিয়ে বিয়ে পড়ানো কাজে সহযোগিতা করেছেন। এমন অভিযোগে এলকাজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। তবে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, কাজিপুর গ্রামের সর্দ্দারপাড়ার (চেয়ারম্যানের পাড়া) সাইফুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩০) সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে বাড়ি ফেরেন। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের কসবা নারায়ণগড়ের শেখ রবিউল ইসলামের মেয়ে রুকছার খাতুন স্বজনদের সাথে গত মাসে রফিকুলের বাড়িতে বেড়াতে আসে। দুই পরিবারের সম্মতিতে গেত ৫ সেপ্টেম্বর দুজনের বিয়ে হয়। কাজিপুর গ্রামের গোলাম বাজার জামে মসজিদের ইমাম ক্বারী বিল্লাল হোসেন ইসলাম ধর্মমতে তাদের বিয়ে পড়ান। বর্তমানে তারা দাম্পত্য জীবন নিয়েই ব্যস্ত। বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে ক্বারী বিল্লাল হোসেন বলেন, বিয়ের কোনো কাগজপত্র পাবেন না। কাগজপত্রের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
এদিকে বিদেশী নাগরিককে বিয়ে করতে আইনি ঝামেলা এড়াতে রফিকুলের পরিবার কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই বালিয়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাহাব উদ্দীনের স্মরণাপন্ন হন। ইউপি চেয়ারম্যানের একই পাড়ায় রফিকুলের বাড়ি। চলতি মাসের প্রথম দিকে কাজিপুর ইউপি থেকে জন্ম নিবন্ধন পায় রুকছার খাতুন। ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাই সাহাব উদ্দীনের সহায়তায় গাংনী ভোটার নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে নতুন ভোটারের জন্য ছবি তোলে রুকছার। রুকছার খাতুন জন্ম সূত্রে ভারতীয় নাগরিক। পশ্চিম মেদেনীপুরের নারায়ণগড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ভারতীয় আইডি নং ডব্লিউ এফ ওয়াই- ১৮১৩৮২৩। জন্ম তারিখ ০৪/১০/১৯৯৭। কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান কীভাবে তার জন্ম নিবন্ধন দিলেন তা নিয়ে এলাকায় তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ইতোমধ্যে গ্রামের কয়েকজন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। চেয়ারম্যান রাহাতুল্লাহ ও তার ভাই সাহাব উদ্দীন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। রাহাতুল্লাহ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও মূলত তার ভাই সাহাব উদ্দীন স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হিসেবে ইউপি’র দাফতরিক কাজ করেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও কর্ণপাত করেন না চেয়ারম্যান।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গেলে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন রফিকুল ও তার পিতা। কথা হয় রুকছার খাতুনের খালু ভারতের কসবার শেখ সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি আরবে রফিকুলের সাথে আমাদের এক ছেলে কাজক করতো। তার সাথে কথা বলার সুবাদে রুকছারের সাথে রফিকুলের পরিচয় হয়। দুই পরিবার চাইলে বিয়ে হবে। একদিকে ভারতীয় নাগরিক অন্যদিকে রুকছার অপ্রাপ্ত বয়স্ক, তাহলে কীভাবে বিয়ে হবে- এমন প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি।
অর্থ নেয়ার বিষয়টি সত্যি নয় দাবি করে গতরাতে ইউপি চেয়ারম্যান রাহাতুল্লাহ বলেন, আমি জন্ম নিবন্ধন দেইনি। তাহলে কীভাবে জন্ম নিবন্ধন হলো প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান তিনি।
অভিযোগে জানা গেছে, কাজিপুর ইউপি সচিব আব্দুর রহমান ও ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মশিউর রহমান জন্ম নিবন্ধন দেয়ার বিষয়টি অবগত। চেয়ারম্যান ও তার ভাই সাহাব উদ্দীনের সাথে জোগসাজসে জন্ম নিবন্ধন করেছেন। এর জন্য তারা দুজনও টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কম্পিউটরে জন্ম নিবন্ধনের সব কাজ সম্পাদন করেন উদ্যোক্তা ও ইউপি সচিব। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও বেমালুম চেপে যান। চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের দোহাই দিয়ে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে এরা দুজনও অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এদিকে এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক। বিদেশী নাগরিককে কীভাবে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ভোটার করা হলো সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেন তিনি। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, ঘটনার দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।