গাংনী হাসপাতালে এমসি দিতে আবারও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

গাংনী প্রতিনিধি: সংঘর্ষে আহত রোগীদের মেডিকেল রিপোর্ট (এমসি) প্রদানে আবারও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার এমসি নিয়ে মামলায় সুবিধা পাচ্ছে একপক্ষ। প্রতিকার চেয়ে অপরপক্ষ সিভিল সার্জন বরাবার আবেদন করেছেন। অবশ্য অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ডাক্তাররা। এর আগে একই অভিযোগে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাবুর দেয়া অভিযোগের তদন্ত চলছে।
অভিযোগে জানা গেছে, তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের আসাদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম পরিবারের মধ্যে গত ১৮ মে সংঘর্ষ হয়। আসাদুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে মাসুম এবং শফিকুল ও আসাদুলের ফুফু মদিনা খাতুন আহত হন। তাদের মাথা ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত হয়। তাদের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অপরপক্ষ- নজরুল ইসলামের ছেলে সাগর, স্ত্রী সাকিলা ও ভাই জামরুল আহত হয়ে একই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
আসাদুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আসাদুলের কোমরে কিডনির ওপরে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর জখম হয়। সেখানে ৭টি সেলাই দেয়া হয়। মাসুমের মাথায় ১০টি ও মদিনার মাথায় সেলাই দেয়া হয় ১৪টি। শফিকুলের মাথায় দুটি কোপের স্থানে সেলাই দেয়া হয় ১৫টি। চারজনেরই আঘাত ছিলো গুরুতর। ভুক্তভোগীদের ভাষায় আঘাতগুলো যেভাবে ছিলো সেমতে মেডিকেলে রিপোর্ট পাননি তারা। ফলে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পুলিশ প্রতিবেদনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মেডিকেল রিপোর্টের নিরিক্ষে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এদিকে নজরুল ইসলাম পক্ষের তিনজনের আঘাত তেমন বেশি ছিলো না। তারপরেও তারা মেডিকেলে রিপোর্ট ভালো পেয়েছেন। ফলে মামলাও তারা বেশি সুবিধা পাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডা. সজিব উদ্দীনের বাড়ি সহড়াতলা গ্রামে। নজরুল ইসলামের বোনের বিয়ে হয়েছে সহড়াতলা গ্রামে। ওই আত্মীয়তার সুবাদে ডা. সজিব উদ্দীন এমসিতে পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এমসি পুনর্বিবেচনা ও পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেয়া এমসিতে অবশ্য ডা. মহসীনা ফেরদৌসি মিষ্টি, ডা. সৈকত রায় ও ডা. সজিব উদ্দীনের স্বাক্ষর রয়েছে। তাহলে ডা. স্বাধীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগীরা বলেন, নজরুলের স্ত্রী চিৎকার করে সবার সামনে ডা. স্বাধীনের সাথে আত্মীয়তার বিষয়টি বলেছে। তাদের পক্ষেই মেডিকেলে রিপোর্ট যাবে বলেও দাম্ভিকতা দেখিয়েছে। যা গ্রামের অনেকেই অবগত। এর পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গাংনী হাসপাতালের একজন কর্মচারী এসব এমসি পক্ষপাতিত্বের হোতা। এসসি সুবিধা নিতে আসা লোকজনের সাথে ডাক্তারদের তিনিই মধ্যস্থতা করেন। তার বিষয়েও হাসপাতালে চরম সমালোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে ডা. সজিব উদ্দীন বলেন, কতোটা সেলাই হয়েছে তার ভিত্তিতে এমসি হয় না। আঘাতটা কতোটা গভীর তার উপরেই এমসি নির্ভর করে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের উসমানে পরিবারের সাথে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির সংঘর্ষ হয়। এতে দু পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। ওই ঘটনার এমসি দিতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেছিলেন উসমানের ভাতিজা বাবু মিয়া। সিভিল সার্জন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. অলোক কুমার গত ২৮ সেপ্টেম্বর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে তদন্ত করেছেন। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি প্রধান। এদিকে বারবার এসসি কেলেঙ্কারির বিষয়ে গাংনী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে প্রশাসনও বিচলিত। হাসপাতালের সুনাম বাঁচাতে তারাও সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।