তিনদিনের মাথায় রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার : ঘাতকের শাস্তির দাবিতে আজ মানববন্ধন

চুয়াডাঙ্গা খাসপাড়ার খুনি মঈনের পিতার ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর খাসপাড়ায় পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে রিপন খুনের ঘটনায় খুনি মঈনের পিতা ছামছদ্দিনের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতের নিকট আবেদন করেছে পুলিশ। ঘটনার তিনদিনের মাথায় আসামিদের রান্না ঘর থেকে খুনি মঈনের পিতার রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপরদিকে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে রিপনের পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসী। এদিকে যতোই দিন গড়াচ্ছে রিপন খুনের প্রকৃত রহস্যর জট খুলতে শুরু করেছে। খুনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কতোজন জড়িত আর খুন পরবর্তী লাশগুম এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে কারা সহযোগিতা করেছে তা পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। পুলিশ একটু ততপর হলেই সবকিছু জানতে পারবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। তবে এটি ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ এবং পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে সচেতনমহল মনে করছে।
গত রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামের সরকারপাড়ার শামসুল হক ওরফে ছামছদ্দিনের ছেলে মুহিন উদ্দিন ওরফে মঈন স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সন্দেহে মোতালেব সরকারের ছেলে রিপনকে (৩০) পরিকল্পিতভাবে খুন করে। পরেরদিন সোমবার সকাল ৬টার দিকে মানচে গাড়ির বিলের পাট জাগের নিচ থেকে রিপনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। ঘটনার পরপরই ব্যাগপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মঈনের মা মর্জিনা বেগম, স্ত্রী মৌসুমি খাতুন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শান্তনা খাতুনকে আটক করে এলাকাবাসী। দুপুরের দিকে তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশ বাটিকাডাঙ্গা গ্রাম থেকে মঈনের পিতা ছামছদ্দিনকে আটক করে। আর ঘটনার ১২ ঘণ্টার মাথায় চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশের চৌকশ অফিসার এসআই ইব্রাহীম ও আশরাফ আলী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুনের মূলহোতা মঈনকে জীবননগরের পেয়ারাতলা নামকস্থান থেকে আটক করেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে রিপনের সেজোবোন নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে ছামছদ্দিন, ছেলে খুনি মঈন ও খোকন এবং সড়াবাড়িয়া গ্রামের আক্কাচ আলীর ছেলে নাজমুলসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। আকটকৃতদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি মঈন ও ছামছদ্দিনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালতে প্রেরণের পর মঈন বিচারকের নিকট খুনের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এদিকে ঘটনার তিনদিনের মাথায় গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে মামলার তদন্তকারী অফিসার গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইব্রাহীম খলিল বাদীর সহায়তায় আসামির বাড়ির রান্না ঘর থেকে খুনি মঈনের পিতা ছামছদ্দিনের রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, মঈনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা রিপনকে খুন করে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। পরে মঈন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বিষয়টি বাড়িতে এসে বলে এবং বাড়ির সদস্যদের সাথে করে নিয়ে গিয়ে রিপনের লাশ গুম করার উদ্দেশে পাটের জাগের নিচে লুকিয়ে রাখে। সেই সাথে মঈন পরনের রক্তে ভেজা জামাকাপড় পাল্টিয়ে নতুন জামাকাপড় পরে ভোররাতের দিকে বাড়ি থেকে সটকে পড়ে। রিপনকে মঈন খুন করেছে বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পেরে সকালে সূর্য ওঠার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারণ যেখানে রিপনকে খুন করা হয়েছে সেখানে মঈনের মা মর্জিনার সে-েল পড়ে ছিলো। ঘটনাস্থল থেকে মঈনের বাড়ি ২শ গজ দূরে। খুনের সাথে মঈনের মা, স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সরাসরি জড়িত না হলেও খুন পরবর্তী লাশগুম এবং মঈনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। সেই সাথে মঈনদের তালামারা ঘর তল্লাশি করলে পুলিশ আরও আলামত উদ্ধার করতে পারবে বলে এলাকাবাসী মনে করছে। এদিকে গতকাল বুধবার মামলার তদন্তকারী অফিসার মঈনের পিতা ছামছদ্দিনের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতের নিকট আবেদন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানি রয়েছে। রিপনের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, খুনের সাথে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত পুলিশ যেনো তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করে। সেই সাথে কোনো নিরঅপরাধ মানুষ যেনো শাস্তি না পায় সেটাও আমরা চাই। কারণ মঈন রিপনকে হত্যা করবে বলে আগে থেকেই মোবাইলে হুমকি দিয়ে রেখেছে। আর রিপনকে হত্যার মধ্যদিয়ে তার প্রমান করেছে। এখন আমরা শঙ্কিত এবং ভীত খুনি মঈন জামিনে বেরিয়ে এসে না জানি আবার কোনো ঘটনা ঘটায়। মঈন নিজ ক্ষমতা বলে এমন ঘটনা ঘটায়নি। তার পেছনে মদতদাতা রয়েছে। তাদেরও মুখোশ উন্মোচন হওয়া দরকার। এখনও রিপন হত্যার আসামি নাজমুল ও খোকনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন করা হবে বলে রিপনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই ইব্রাহীম বলেন, রিপন খুনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং পলাতক নাজমুল ও খোকনকে গ্রেফতারে জাল বিস্তার করা হয়েছে। দোষীরা কোনোভাবেই রেহায় পাবে না।