চুয়াডাঙ্গা জেলায় এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আবাদ

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মানকচুর জুড়ি নেই
বখতিয়ার হোসেন বকুল: চুয়াডাঙ্গা জেলায় এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মানকচুর আবাদ। ভুট্টাসহ অন্যান্য আবাদে ঝুঁকি থাকলেও কম খরচে ঝুঁকিমুক্ত এ মানকচুর আবাদ যে কেউ করতে পারেন। বেকার যুবকদের জন্য হতে পারে আয়ের বিকল্প উৎস। শুধুই কি তাই? সুষম খাদ্য তালিকায় এর জুড়ি মেলা ভার।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর শেখপাড়ার আব্দুল মান্নান জেলার মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন মানকচুর আবাদ। বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে ঘুরে চারা সংগ্রহ করে ২৫ কাঠা জমিতে করেছেন ওই মানকচুর আবাদ। একই জমিতে রয়েছে দেড় হাজার আ¤্রপালির চারা। ওই চারা আমবাগানের মধ্যেই লাগিয়েছেন ২ হাজার মানকচু। আমগাছ বড় হতে হতে তিনি ওই জমিতেই আরও একবার করতে পারবেন মানকচুর আবাদ।
তিনি জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের পরামর্শেই বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন মানকচুর আবাদ। একবিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৬শ চারা লাগানো যাবে। আবাদটি একটু দীর্ঘ মেয়াদী হলেও খরচ খুবই কম। রোগ বালাইও নেই। তাছাড়া গরু-ছাগলেও খায় না। বিঘা প্রতি লেবারসহ সার ও সেচ খরচ বাবদ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এক বছরের একটু বেশি সময় রাখতে পারলে প্রতিটি গাছ থেকে সর্বনি¤œ ৬ কেজি এবং সর্বোচ্চ ১০ কেজি পর্যন্ত মানকচু পাওয়া যেতে পারে। ইতোমধ্যেই মানকচু তুলে বাজারজাত শুরু করা হয়েছে। ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর এমন থাকলে প্রায় ২ লাখ টাকার মানকচু বিক্রি হতে পারে। আগামী বছর আরও দু বিঘা জমিতে মানকচুর আবাদ করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, মানকচু একটি উন্নতমানের শর্করা জাতীয় খাদ্যের উত্তম উৎস। একগ্রাম মানকচুতে ১১২ গ্রাম ক্যালোরি বা শক্তি থাকে। যা আলুর চেয়ে কয়েকগুন বেশি। এছাড়া এতে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে ঠিক রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। যা পেশার ও নাড়ির স্পন্দন ঠিক রাখে। এর আরও একটি বড় গুন হচ্ছে শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরির মাধ্যমে ফুঁসফুঁস ও মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া সব ধরনের রোগীদের জন্য মানকচু একটি উত্তম সুষম খাদ্য।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, দোআঁশ মাটি এবং হালকা ছায়া জমিতে মানকচুর আবাদ ভালো হয়। জয়রামপুরের চাষি আব্দুল মান্নান জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই আবাদ শুরু করেছেন। মানকচু সাধারণত বসতভিটার আনাচে-কানাচে লাগানো হয়। এটা একটি ভালো মানের সবজিও বটে। সাথি ফসল হিসেবে আমরা মানকচুর আবাদ করার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছি। যে সমস্ত চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে এই মানকচুর আবাদ করতে চান তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। খরচ যেহেতু কম তাই এলাকার বেকার যুবকরাও করতে পারেন মানকচুর আবাদ। এটা হতে পারে তাদের আয়ের বিকল্প উৎস। ঘুচতে পারে বেকারত্বের দুর্নাম। সাথি ফসল হিসেবে অন্যান্য আবাদের চেয়ে মানকচুর আবাদ খুবই লাভজনক একটি আবাদ বলেও জানিয়েছেন তিনি।