চুয়াডাঙ্গার আলোচিত শিপরাসহ গ্রেফতার ৫২ ॥ হেরোইনসহ হরেক পদের মাদক উদ্ধার

খুলনা ডিআইজির নিদের্শনায় বিশেষ অভিযান অব্যাহত ॥ ঝিনাইদহে গ্রেফতার ১৪২ কুষ্টিয়ায় ৬২

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনা বিভাগের সকল জেলার সবক’টা থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। ডিআইজি মো. দিদার আহম্মদের নির্দেশে চলমান বিশেষ অভিযানে গতপরশু রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত মাদককারবারী শিপরা খাতুনও রয়েছে। ঝিনাইদহে গ্রেফতার হয়েছে ১৪২ জন। আর কুষ্টিয়ায় গ্রেফতারের সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৬২ জনে।
চুয়াডাঙ্গায় গ্রেফতারকৃত ৫২ জনের মধ্যে জেলার ৪টি থানায় জিআর মামলার ২২ জন, সিআর মামলার ৮ জন, মামলায় ২১ জন, সিআর সাজপ্রাপ্ত ১ জন রয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ বোতল ও ৫ লিটার ফেনসিডিল, ৩৭৫ গ্রাম গাঁজা, ১৫ চিপ ইয়াবা। চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুজরুকগড়গড়ি বুদ্ধিমানপাড়ার একটি মেহগনি বাগানে অভিযান চালিয়ে শিপরা খাতুনকে (৫২) আটক করা হয়। তার নিকট থেকে উদ্ধার করা হয় ৫০ গ্রাম হেরোইন। শিপরা খাতুন দীর্ঘদিনের চিহ্নিত মাদককারবারী। বাবুলের স্ত্রী শিপরা খাতুন ঠিক কতোবার গ্রেফতার হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা কতো তার হিসেব রাখাই দুষ্কর। তাকে গতকাল গ্রেফতারের পর ডিবি আরও একটি মাদক মামলা রুজু করেছে। ডিবির এসআই জগদীশ চন্দ্র বসু, এএসআই মুহিদ হাসান, এএসআই রফিক ও এএসআই হাফিজুর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এ অভিযান চালান। এছাড়া ডিবির এসআই ইব্রাহিম, এসআই মুহিত, এসঅই নেয়াজ মুরশিদ ও এএসআই আসাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে কেদারগঞ্জপাড়ার মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে ফারুক হোসেনকে (৩০) পাকড়াও করে। তার নিকট থেকে উদ্ধার করা হয় ১২ গ্রাম হেরোইন। শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই অহিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করেছেন। এরা হলো- মুসলিমপাড়ার বিশারত আলীর ছেলে রানা (৩৮) ও ফার্মপাড়ার মৃত আলাউদ্দীনের ছেলে আরমান (২৪)। পুলিশ বলেছে, আরামনকে পুরাতন স্টেডিয়ামের নিকট থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার নিকট থেকে উদ্ধার করা হয় ৫০ গ্রাম গাঁজা। রানাকে হোমিওপ্যাথিক কলেজের নিকট থেকে ১০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ৭ জনসহ বিভিন্ন মামলার মোট ১০ জনকে আটক করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদের নেতৃত্বে থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেন বাবু, এসআই আমজাদ হোসেন, এসআই আব্দুল বাকী, এসআই মিজবাহুর রহমান, এএসআই মহিউদ্দীন, এএসআই রাশেদ, এএসআই মনির ও এএসআই তৌহিদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে দর্শনা মোহাম্মদপুরের মৃত রবিউলের ছেলে খলিলুর রহমান, শান্তিপাড়ার চুন্নুর ছেলে সোহেল, মোবারকপাড়ার জালাল উদ্দীনের ছেলে আবরা, একই পাড়ার বাবুর স্ত্রী ছকিনা বেগম, হাউলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আফসার ম-লের ছেলে মিনাজ হোসেন (৩৮), ছুটিপুর গ্রামের ছলেমানের ছেলে মিলন, একই গ্রামের ঠা-ুর ছেলে শান্তি, জয়রামপুরের মৃত ইউছুফ ম-লের ছেলে নাসির উদ্দীন (৫০), বুইছিতলা গ্রামের ইউছুফ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫২) এবং একই গ্রামের রহিম বকসের ছেলে রমজানকে (৪৩) আটক করেন। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত কওে বলেছেন, আটক সকল আসামিকেই গতকাল শুক্রবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গোবিন্দপুরের আজমকে ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রেলস্টেশন এলাকা থেকে গাঁজা বিক্রিকালে তাকে আটক করে। পুলিশ বলেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের হবিবার রহমানের ছেলে আজম (৩৫) দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করছিলো। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাদকব্যবসায়ীর জোন/মুনিষ হিসেবেও মাদক বিক্রি করতো। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রেলস্টেশনে গাঁজা বিক্রিকালে আলমডাঙ্গা থানার এসআই টিপু সুলতান তাকে আটক করে। পরে তার নিকট থেকে ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত আজমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছিলো।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৪২ জন গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু মাদকদ্রব্য। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, নাশকতা প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এ অভিযানে ঝিনাইদহ সদর থেকে ৭২ জন, শৈলকুপা থেকে ৩১ জন, মহেশপুর থেকে ১৪ জন, কালীগঞ্জ থেকে ৬ জন, হরিণাকুণ্ডু থেকে ১০ জন ও কোটচাঁদপুর থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বেশকিছু মাদকদ্রব্য। গ্রেফতারকৃতদের নামে বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় জেলাব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন মামলাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সময় ৬২ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান জানান, জেলায় নাশকতাসহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৬২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর থানায় ১৪, কুমারখালীতে ১০, খোকসায় ২, মিরপুরে ৫, ভেড়ামারায় ৪, দৌলতপুরে ২০ এবং ইবিতে ৭ জনকে আটক করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।