উদ্বোধনী দিনে উপচেপড়া দর্শক ॥ মেহেরপুরকে হারিয়ে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গার শুভ সূচনা

জাঁকজমক আয়োজন ॥ চুয়াডাঙ্গায় উদ্বোধন হলো জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৭

ইসলাম রকিব: দর্শক উপচেপড়া ভিড়, দৃষ্টিনন্দন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্যদিয়ে চুয়াডাঙ্গায় উদ্বোধন হলো জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৭। উদ্বোধনী দিনে ২-০ গোলে মেহেরপুর জেলা দলকে পরাজিত করে শুভ সূচনা করেছে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা জেলা দল। চুয়াডাঙ্গার নূরনগর-জাফরপুরস্থ নতুন স্টেডিয়ামে উপচেপড়া দর্শকের ভিড়ে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ খেলার আগে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজ পরেই জেলা শহরের অলি-গলি ও অন্যান্য উপজেলা শহর থেকে জন¯্রােত শুরু হয়ে যায় নূরনগর-জাফরপুর জেলা স্টেডিয়ামের দিকে। ঘড়ির কাঁটায় যখন ২টা ৩০ মিনিট। তখনো স্টেডিয়ামের অধিকাংশ গ্যালারি ফাঁকা ছিলো। বিকেল ৩টা বাজতে না বাজতেই স্টেডিয়ামের সব গ্যালারি দর্শকে পরিপূর্ণ হয়ে য়ায়। ৩টা ৫ মিনিটে ফুটবল মানব মাসুদ রানা মাঠে নেমে ফুটবলের নানা কসরত ও ফুটবল শৈলী প্রদর্শন করে দর্শক মাতিয়ে তোলেন। ৩টা ১৫ মিনিটে শাহ আলম সনির লেখা ও সুরকরা এবং হিরন-উর-রশীদ শান্তর গাওয়া থিম সং ‘গোল…গোল…গোল-গোল, নয় গ-গোল, সবাই একই আওয়াজ তোল’- পরিবেশন করে সরকারি শিশুসদনের মেয়েরা। থিমসং শেষ হলে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা দলের খেলোয়াড়রা প্লে-বয়দের নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। একই সাথে মাঠে প্রবেশ করেন টুর্নামেন্টের উদ্বোধক চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। শুরু হয় আবহাওয়া কণ্ঠে গাওয়া জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি……। এ সময় স্টেডিয়াম গেটে প্রবেশের সময় যে ৫ হাজার ছোট ডেমি জাতীয় পতাকা দর্শকদের দেয়া হয়েছিলো তা গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে তারা পতাকা নাড়াতে নাড়াতে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে থাকে। তৈরি হয় জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে এক আনন্দঘন পরিবেশ। জাতীয় সঙ্গীত শেষে গ্যালারিভর্তি দর্শক উভয় দলের খেলোয়াড়গণ করতালি দিয়ে স্টেডিয়াম এলাকা চমকিত করে তোলেন। মাঠে খেলোয়াড়দের মাঝখানে দাঁড়িয়েই টুর্নামেন্টের উদ্বোধক চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ উদ্বোধনী বক্তব্য ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, এতো বড় একটি ক্রীড়া কর্মযজ্ঞ আমি চুয়াডাঙ্গাবাসী সকলের সহযোগিতায় সফলভাবে শুরু করতে পেরেছি। সেই সাথে মাঠে আগত সকল দর্শক ও ফুটবলপ্রেমীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ফুটবলের প্রাণ। আপনারা মাঠে এলেই ফুটবল বাঁচবে। চুয়াডাঙ্গার ফুটবল ফিরে পাবে আবারও সেই সোনালি অতীতের হারানো গতি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ৬ বিজিবির পরিচালক রশিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান পিপিএম, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ড. এবিএম মাহমুদুল হক, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খন্দকার ফরহাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, ডিএফএ’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম লাড্ডু, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উপপরিচালক জাফর ইকবাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দে, সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় শুটার মাস্টার মাহমুদুল হক লিটন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি আজাদ মালিথা, সাবেক কৃতী ফুটবলার আবদুল মোমেন জোয়ার্দ্দার, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার, সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফসহ উভয় দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাবৃন্দ। উদ্বোধন শেষে অতিথিরা মাঠ ত্যাগ করলে টসের মাধ্যমে ম্যাচ শুরু হয়। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের মধ্যদিয়ে চলা উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের প্রথম অর্ধের ২১ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার আই.কে দলনায়ক সোহেলের দেয়া বলে গোল করে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় চুয়াডাঙ্গা। প্রথমার্ধ্বে আর কোনো গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের ২৩ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের ৯ নং জার্সি পরিহিত খেলোয়াড় এমরান আবারও গোল করে ২-০ গোলে ব্যবধান বাড়ান। দ্বিতীয়ার্ধ্বে আর কোনো গোল না হওয়ায় উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা জেলা দল ২-০ গোলে জিতে শুভ সূচনা করে। খেলা শেষে অংশগ্রহণকারী দু জেলা দলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৌজন্য পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়া বিচারকদের রায়ে নির্বাচিত চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের ৯ নং জার্সিধারী খেলোয়াড় এমরান শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন। উদ্বোধনী ম্যাচে জয়লাভ করায় চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের কোচ সরোয়ার হোসেন জোয়ার্দ্দার মধু ও ম্যানেজার মাহাবুল ইসলাম সেলিম সকল খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উদ্বোধনী খেলাটি পরিচালনা করেন ঢাকা থেকে আগত হুমায়ুন কবীর, সাইফুল ইসলাম, এসএম জুনায়েদ শরীফ ও ইকতিয়ার আহম্মেদ। খেলা চলাকালীন সময়ে খেলার ধারাভাষ্যকারদের দেয়া ধারাভাষ্যে চুয়াডাঙ্গা ফুটবলের অতীত-বর্তমান ও স্টেডিয়াম নির্মাণের পেছনে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের নাম উঠে আসে। নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি হুইপ দু যুগের বেশি সময় ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোলানাথ দে’র কথা বারবার দর্শকদের মুখে বাজতে থাকে। জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, খেলা শুরুর আগে আমি স্কাইফে হুইপকে অবগত করেছি। সফলভাবে টুর্নামেন্ট শেষ হোক তিনি সেই দোয়া করেছেন।
স্টেডিয়ামের জমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণে সাবেক জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারের ভূমিকার কথাও উঠে আসে। এছাড়া আরও যারা এর নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন তাদেরও স্মরণ করা হয়। তাদের পরিশ্রমের ফলেই আজ জাতীয় মানের একটি স্টেডিয়াম চুয়াডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ একই মাঠে বিকেল ৩টায় মুখোমুখি হবে নাটোর জেলা দল বনাম নড়াইল জেলা দল।