গরুচোরচক্রসহ মাদক চোরাকারবারীদের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে

দামুড়হুদায় সাংবাদিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সাংবাদিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম। দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা গরুচোর চক্রের ৮ সদস্যকে আটকের পর আইনশৃঙ্কলার সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দামুড়হুদা মডেল থানার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) কলিমুল্লাহ, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম জানান, পুলিশের বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ১৩, দামুড়হুদা মডেল থানা ১৩, জীবননগর থানা ৭ ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। গ্রেফতারকৃত ৪২ জনের মধ্যে ৮ জন আন্তঃজেলা গরুচোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ চুয়াডাঙ্গা ও পার্শবর্তী কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত গরুচোর চক্রের সদস্যরা হলো চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের মৃত আজিবর রহমানের ছেলে সুন্নত আলী (৫০), হকপাড়ার মৃত নুরনবীর ছেলে লাল্টু (৩০), ফার্মপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে দুলাল (৩০), মুক্তিপাড়ার আব্দুল বারেকের ছেলে আরজ আলী (৪৫), দামুড়হুদার মোক্তারপুর গ্রামের মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে মিলন (২৮), দামুড়হুদা উপজেলা শহরের খাঁপাড়ার মকছেদ আলীর ছেলে তাহাজ (৪০), বিষ্ণুপুর গ্রামের চান্দু মণ্ডলের ছেলে তরজ (৩০) এবং কুষ্টিয়া মিরপুর থানার সদরপুর গ্রামের মৃত খেলাফত মণ্ডলের ছেলে বদরউদ্দিন ওরফে বুদো (৫২)। এছাড়া বাকীরা বিভিন্ন মামলার আসামি। বিশেষ অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে দামুড়হুদার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক গবাদি পশু সিরিজ আকারে চুরি হতে থাকে। এরমধ্যে কয়েকটি ঘটনা উদঘাটিত হলেও বেশিরভাগ গরুচুরির ঘটনা অন্ধকারে থেকে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১ মাসের ব্যবধানে দামুড়হুদা উপজেলার কুনিয়া চাঁদপুর, গোপিনাথপুর, রামনগর, মজলিসপুর, জুড়ানপুর, চিৎলাসহ বেশকিছু এলাকা থেকে প্রায় ৩০টিরও অধিক গরু চুরি করে নিয়ে যায় ওই সংঘবদ্ধ আন্তজেলা গরুচোরচক্র। গরু চুরির ঘটনায় থানায় বেশ কয়েকটি জিডিও হয়। এরই এক পর্যায়ে গত মাসের ২৩ তারিখ রাতে দামুড়হুদা উপজেলা রামনগর গ্রামে গরু চুরি করে পালানোর সময় দামুড়হুদার কোমরপুরের চিহিৃত গরুচোর শফি গ্রামবাসীর হাতে আটক হয়। পালিয়ে যায় আন্তজেলা গরুচোরচক্রের ৭ সদস্য। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী গরুচোর শফিকে পিটিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনার পর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের এক পর্যায়ে দামুড়হুদা থানা পুলিশ বিষ্ণুপুর গ্রামের চান্দুর ছেলে তরজকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শুরু করা হয় জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তরজ ওই রাতে গরু চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো মর্মে স্বীকারোক্তি দেয়। সেই সাথে ওই রাতে পালিয়ে যাওয়া গরুচোরদের নাম ঠিকানাও জানায় সে। তারই ধারাবাহিকতায় দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদের নেতৃত্বে সেকেন্ড অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেন, এসআই আমজাদ হোসেন, এএসআই সবেদ আলীসহ দামুড়হুদা মডেল থানার একটি চৌকসদল গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার  বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্ত:জেলা গরুচোরচক্রের অন্যতম সদস্য ওই ৮ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়াকালে মাদক কারবারিদের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে বলেও জানান নবাগত পুলিশ সুপার মাহবুবুবর রহমান।

এর আগে নবাগত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান দামুড়হুদা থানায় পৌঁছুনোর সাথে সাথে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) কলিমুল্লাহ, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ।