খানা পিনেয় হট্টোগোল ও আয়োজনে ত্রুটি

মন্তব্য প্রতিবেদন ……………………..

রফিকুল ইসলাম: এখন আর একান্নবর্তী পরিবার নেই, নেই সেই গ্রাম্য খানার বড় বড় আয়োজন। গোষ্ঠীর যতো আত্মীয় আছে দূর-দূরান্তে তাদের সকলে তো আসতোই, গ্রামের কোনো বাড়িতেই রান্না হতো না ওইদিন যেদিন গ্রামে গ্রাম্য খানার আয়োজন হতো। এখন এসব দূরের শোনা গল্প হলেও অল্প পরিসরে যে খানা-পিনের আয়োজন হয় না, হচ্ছে না তাও নয়। তবে আয়োজকদের অদূরদর্শিতায় অনেক সময় আমন্ত্রিতরা আপ্যায়িতের বদলে অনাহারে অপমানবোধ করতেও বাধ্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে দুর্নাম কেনার মতোই অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটি দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতির মৃত্যুর পর তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামানায় গতপরশু চুয়াডাঙ্গাস্থ তার প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত কুলখানির ক্ষেত্রে হয়েছে।
খানা-পিনে পেলে কিছু মানুষ যেন ক্ষুধার্ত হায়েনার চেয়েও হিং¯্র হয়ে ওঠে। সামান্য ধৈর্যের বদলে তাদের হুড়োহুড়ির কারণে পুরো আয়োজনই ভেস্তে যায়। দৃশ্য দেখে অন্যরাও আয়োজনে আগ্রহ হারায়। তবে পূর্বে গ্রাম্য খানায় এমন দৃশ্যের অবতারণা খুব কমই হয়েছে। অভিজ্ঞরা বিলক্ষণ জানেন, হাড়ি হাড়ি রান্না করলেই হয় না, শ শ মানুষকে আমন্ত্রণ জানালেও আয়োজন পূর্ণতা পায় না। পূর্ণতা দিতে হলে দক্ষতার সাথে সব কিছু সামলাতে হয়। খানা-পিনের খবর পেয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়া সমাজে সামান্যে অসতর্কতাকেই ডেকে আনে সর্বনাশ। এসব বুঝেই আয়োজনের অনুযায়ী আমন্ত্রণের পরিধি কমানো বাড়ানো হতো। গ্রাম্য খানায় বা বড় কোনো আয়োজনে সে মতোই হোক আর অন্য কিছু হোক, গ্রামের অভিজ্ঞ মাতবরের ওপরই ন্যাস্ত থাকতো হান্ডিখানার পুরো দায়িত্ব। গ্রামের উৎসাহী দক্ষ যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলা হতো খাজনদার বাহিনী। তাদের নিয়ে পূর্বরাতে দফায় দফায় বৈঠক হতো। কে কোন লাইনে, কে কি সরবরাহ করবে, কে কোন পদের খাবার তুলে দেবে খানেওয়ালার পাতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিবেশ অনুকূলে রাখা অতিব জরুরি। হাজি মোজাম্মেল হকের কুলখানিতে কোনটি ঘাটতি ছিলো? তার তিন পুত্র কি কোন কিছুতে কার্পণ্য করেছে? কোনোভাবেই কি করা উচিত? হাজি মোজাম্মেল হক একজন শিল্পপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে পর পর তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। কুলখানিতে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষই বেশি আমন্ত্রিত ছিলেন। তারা যখন খাওয়ার পরিবেশ দূরের কথা, ধাক্কা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে না পেরেছে তখন ক্রোধ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিশ্চয় আমন্ত্রকদের অজানা থাকার কথা নয়। তাছাড়া বেশি মানুষের আয়োজনে বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেয়া হলো না কেনো?
একথা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, হাজি মোজাম্মেল হক জীবদ্দশায় যা রেখে গেছেন তা কোন হিসেবেই কম নয়। তার ছেলেদের মানসিকতাও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে। তাহলে একজন শিল্পপতির কুলখানিতে এতোটা বিশৃঙ্খলা হলো কেন? কেন হুড়োহুড়ি, ভাঙচুর ধাক্কাধাক্কি? তবে কি আয়োজনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে অভিজ্ঞতায় ঘাটতি ছিলো? মানুষের হাউখাও পরিস্থিতির কারণে আয়োজন ভেস্তে গেছে বলে দায় এড়ানোটা অবশ্যই অজুহাত। দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতির কুলখানিতে কতোজনকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, কতোজন হাজির হতে পারে তা অনুমান করতে না পারাটাও কি অন্ধত্ব নয়? অজুহাত খাড়া করে মানুষের ওপর দোষ চাপানো মানে প্রয়াত শিল্পপতির পুত্রত্রয়ের কাছে এলাকাবাসীকে খাটো করা।