সম্প্রীতি রক্ষায় সকলেরই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার

জন্মের আগে কোনো কর্মের কারণে কোনো মানুষ শাদা-কালো কিংবা তামাটে হয়ে যেমন জন্মায় না, তেমনই কে কোন প্রান্তে কোন ঘরে জন্মাবে তাও সে জন্মের আগে নির্ধারণ করতে পারে না। তারপরও ধর্ম-বর্ণ জাতপাত নিয়ে বিশ্বজুড়ে বড্ড বাড়াবাড়ি। অবশ্য কিছু দেশ রয়েছে যেখানে বৈষম্যহীনতার পরিবেশ এনে দিয়েছে সুখময় সুবাতাস।
জন্মের পরই পায় ধর্ম, বর্ণ, জাতি ভেদের পাশাপাশি নিজেদের বলে দাবি করার মতো ভূখ-। অবশ্য কোনো কোনো প্রান্তের বহু মানুষ রয়েছে যারা ওই ভূখ-ে জন্মেও নিজেদের বলে দাবি করতে পারে না। ধর্ম বর্ণ ভাষা তাদের উদ্বা¯ুÍ করে তোলে। যেমন রোহিঙ্গা। ওদেরও উৎখাতের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ধর্ম-বর্ণ ও ভাষা। শুধু কি উৎপাত উৎখাত? ধর্ম নিজেদের পৃথক করতেও উৎসাহিত করে, তা না হলে আপন দেশকে পর বানানোর পথে কি হাঁটে কেউ? দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে গতপরশু চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার নাটুদহ তালসারি থেকে ২১ নারী-পুুরুষ ও শিশুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ প্রতিবেদনের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ৯ জনকে মেহেরপুর মুজিবনগর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবরটিও গুরুত্ব সহকারে পত্রস্থ হয়েছে। কর্মসংস্থানের জন্য নয়, ধর্মান্ধতার জন্য দেশ ছাড়ার মধ্যে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিও যে কম দায়ী নয় তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। যদিও সম্প্রীতির গর্বিত সমাজ ছেড়ে গোপনে পালিয়ে গিবত ধর্মান্ধতারই নগ্ন প্রকাশ।
কোনো ধর্মেই কি বলা আছে যে, ওই ধর্মের মানুষ পৃথিবীর নির্দিষ্ট ওই স্থানে জন্মাবে? ধরিত্রীর বুকে মানুষের আবির্ভাব বর্ণনাতেও তেমন সীমারেখা আঁকা নেই। কালক্রমে প্রয়োজনের তাগিদেই পৃথিবীর বুকে পাঁচিল তুলেছে। স্থাপন করেছে তারকাঁটার বেড়া। ধর্ম-বর্ণ জাতপাত পৃথকীকরণ প্রথা এক সময় সমাজে স্বস্তির স্বপ্ন দেখালেও কালক্রমে সভ্যতার মুখেও কি মাখাচ্ছে না কালিমা? ইসরাইল-প্যালেস্টাইনই শুধু নয়, ধর্মের মর্মবাণী চরম স্বার্থান্ধে বিলীন না হলে জ্বালাও-পোড়াও কাটো-মারো ধর্ষণ করে দেশ থেকে তাড়াও স্লোগানে কি কোনো দেশের সেনা সদস্যরা মাঠে নামতে পারে? কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন আমাদের যেমন বোঝা, তেমনটি না হলেও দেশেরই একটি ধর্মাবলম্বীদের দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা দেশের সা¤্রদায়িক সম্প্রীতিকেই কি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে না? ওরা ওখানে পৌঁছে সহানুভূতি পেতে গিয়ে যা বলে তা সেখানে থাকা সংখ্যালঘুদের শুধু মনোকষ্টেরই কারণ হয়ে দাঁড়ায় না, তাদের মধ্যেও দেশ ছেড়ে সংখ্যাগুরু দেশে চলে আসার প্রবণতা বাড়তে থাকে। সমাজের পুরোনো এ রোগ ক্ষতিকর।
দামুড়হুদা থানা পুলিশের হাতে ধরাপড়া ২১ জনের সকলেই গোপালগঞ্জের বলে তারা দাবি করেছেন। দেশে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নীতি আদর্শের মধ্যেই পড়ে সা¤্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা। দেশ শাসনের ধরন বরণে তার প্রমাণও স্পষ্ট। তারপরও কেন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া? আমাদের সকলেরই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।