সভ্যতার আলো পৌঁছুলেও সচেতনতার আলোয় ঘাটতি

মন্তব্য কলাম………………..

রফিকুল ইসলাম: ধরিত্রীর বুকে এমন কিছু সমাজ আছে যেখানে এখনও সভ্যতার আলো পৌঁছোয়নি, আবার এমন সমাজও রয়েছে যেখানে সকলেই ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত। কে কার চেয়ে কতোটা ভালো হতে পারে সেই প্রতিযোগিতা যে সমাজে সেই সমাজের চিত্রটা অনুমান করলেও সুখ অনুভূতিটাই যেন সুখ সাগরে ভাসিয়ে নেয়। আবার এমনও সমাজ রয়েছে, যেখানে কেউ কোনো অন্যায় করলে সেটা সুধরানোর সুযোগ দিতেই মোড়ে মোড়ে তুলে ধরা হয় তার পূর্বে করা ভালোকাজগুলোর বর্ণনা। কিছু সমাজ আছে যেখানে কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেই অভিযুক্তকে মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। আমাদের সমাজ নিশ্চয় অতোটা অসভ্য নয়। এ সমাজে সভ্যতার আলো পৌঁছুলেও সচেতনতার আলোতে যে বড্ড ঘাটতি তা নিশ্চয় সমাজেরই সচেতন অংশ অস্বীকার করবে না।
একত্রিশ বছর আগে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে যাওয়া এক যুবতী গৃহকর্তার ছেলের লালশার শিকার হন। যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তা নিয়ে সালিস হয়। সালিসে মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত মতাবেক যুবতীর নামে কিছু জমি দেয়া হয়। অন্তঃসত্ত্বার কোল জুড়ে যখন আসে কন্যা সন্তান, তার জন্যও কিছু আদায় করে দেয় তখনকার সমাজ। সেই সমাজের ধরন বরণ ৩১ বছরে বদলেছে বহু। ফলে অতোদিন পর সেদিনের সেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া গৃহপরিচারিকা ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেছেন। মামলা করার সাথে সাথে নিশ্চয় কেউ দোষী হয়ে যান না। আইনের দৃষ্টিতে স্বাক্ষ্য প্রমাণের প্রেক্ষিতে আদালত রায় দেন। সেই রায়ে দোষী হলেই কেবল তাকে দোষি বলা যায়। তবে এমন কিছু অভিযোগ আছে যা উত্থাপনের সাথে সাথে আমাদের সমাজে রে রে পড়ে যায়। যেমন চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ের হাফিজুর রহমান লাল্টুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত শিশু বলৎকারের অভিযোগ নিয়ে এলাকায় মুখোরচক গল্পই শুধু শুরু হয়নি, তাকে যতোটা বিকৃত করা যায় তারই চেষ্টা চলছে। অথচ সকলেরই উচিৎ তদন্তে সহযোগিতা করা। প্রকৃত সত্য উৎঘাটনের মধ্যদিয়ে অপরাধের মাত্রা অনুপাতে শাস্তি নিশ্চিত করা। যেহেতু অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে আমাদের সমাজে প্রচলিত আইন রয়েছে, রয়েছে আইন প্রয়োগের যাবতীয় ব্যবস্থা, সেহেতু আইনের প্রতি সকলেরই শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্চনীয়।
দামুড়হুদা গোবিন্দহুদার ফার্নিচার ব্যবসায়ী আজিজুল ৩১ বছর আগে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ করেনি, ধর্ষণের শিকার গৃহপরিচারিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে সন্তান প্রসব করেনি তা যেমন নিশ্চিত করে বলা যাবে না, তেমনই সব অভিযোগই সত্যি তাও ধরে নিয়ে অভিযুক্তকে ধিক্কার দেয়া সভ্য সমাজের কাজ নয়। ধিক্কার যদি দিতেই হয় তা হলে বেশি করে ওই ৩১ বছর আগের সমাজ ব্যবস্থাকেই বেশি বেশি করে ধিক্কার জানানো উচিৎ নয় কি? একইভাবে ছাত্রজীবনে যে যুবক নেতৃত্ব পেয়েছে, পরবর্তীতে তার সামাজিক নানা উদ্যোগের বেশ কিছু নিদর্শনও গড়ে উঠেছে, সেই যুবকের অগ্রযাত্রা থামাতে চক্রান্ত অমূলক নয় যেমন, তেমনই সে যে অন্যায় করতে পারে না, অন্যায় করেনি তাও ধরে নিয়ে তাকে ধোয়া তুলশি ভাবার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে সমাজের সচেতন কাতারে যাদের আবির্ভাব, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপই সতর্কতার সাথে হওয়া উচিৎ। যদিও কখনো কখনো তাদেরই কারো কারো সামান্য বেখেয়ালে কিম্বা উত্তেজনার বসে অতি আবেগের তাড়নায় ‘করা ভুল’ পুরো ভবিষ্যতটাকেই শুধু কেড়ে নিতে চায় না, অতীতের সব গুণাবলিও ম্লান করে দেয়। সে কারণেই সমাজের প্রতি যাদের দায়বদ্ধতা বেশি, সমাজ যাদের দ্বারা উপকৃত হয় তাদেরই বেশি করে সতর্ক হওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। চক্রান্ত? অনেক ক্ষেত্রে অসতকর্তার কারণেও সে সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশ্বাস ভঙ্গও মানুষকে বেকায়দায় ফেলে।
হাফিজুর রহমান লাল্টুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ গুরুতর। মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। দামুড়হুদার আজিুজুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দোষী হলে আইনের দৃষ্টিতে দোষের মাত্রা বুঝে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই সমাজ উপকৃত হবে। আর নির্দোষ হলে? মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ উত্থাপনকারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আইনগত সুযোগ রয়েছে। ফলে সমাজের স্বার্থেই প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে সমাজের দায়িত্বশীলদেরও অবদান রাখা দরকার। দরকার সুন্দর সমাজ গঠনে সমাজের সকলকে ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল করার মতো পরিবেশ গড়ে তোলা।