যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই বাড়ে প্রত্যাশা

মন্তব্য প্রতিবেদন…………………………

রফিকুল ইসলাম: একদিকে দৃষ্টি দিলে নাকি অন্যদিকে অন্ধকার হয়- এ উক্তি যুক্তিকে খোড়া করে সব দিকে তাকানোর ক্ষিপ্রগতি এনে চুয়াডাঙ্গাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জিয়াউদ্দীন আহমেদ। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১২০ দিনের মাথায় এক ঘণ্টায় জেলাজুড়ে সাথে সাত লাখ বৃক্ষের চারা রোপণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনই শুধু করেননি, অচল খেলার মাঠে উড়োচ্ছেন উষ্ণতার ধুলো। এ যেন হেঁসেল থেকে হলিউড, রাজস্ব আদায়ের চৌকি থেকে রাখাল বালককে বিদ্যালয়ে নেয়ার মতো বিচক্ষণতা। তড়িৎ কর্মা প্রশাসনিক এ কর্তা- কথায় নয়, কাজেই যে বড় বিশ্বাসী তা বিচক্ষণ প্রমাণ করে ছেড়েছেন এই ক’দিনে। কাজের কারণেই চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রত্যাশাও বাড়িয়েছেন বহুগুণ। যার কাছে পাওয়া যায়, তার প্রতিই প্রত্যশা বাড়ে।
বজ্রপাত থেকে প্রাণ রক্ষার্থে তাল-নারকেল গাছ লাগাতে হবে। অনাবৃষ্টি দেখা দিলে পাখ পাখালির জন্য আগানে বাড়ানে বাড়ির বারান্দায় ছোটবড় পাত্রে রাখতে হবে পানি। সাবধান! ওই পানিতে মশা লার্ভা ছাড়ার আগেই বদলানোর দিকেও নজর রাখতে হবে। সড়কে অবৈধযানের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, অঙ্গহানিতে সমাজে বাড়ছে পঙ্গুত্বের বোঝা? না, এসব আর সহ্য করা হবে না। অবৈধযানের কারখানা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রাইভেট পড়নো, কোচিং বাণিজ্যে মেতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে অনিহা কিংবা শিক্ষার্থীদের কৌশলে চাপ দিয়ে বাড়ি আসতে বলছে? না, কোনোভাবেই চরম এই অন্যায়কে মেনে নেয়া যাবে না। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক তথা অভিভাবকত্বের দায়িত্বভার নেয়ার পর পরই তিনি পৃথক পৃথকভাবে সংশ্লিষ্টদের ডাকলেন। বসলেন আলোচনায়। নিজের সিদ্ধান্ত চাপানোর বদলে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে যে পদক্ষেপ নিলে তার বাস্তবায়ন সম্ভব সেই সিদ্ধান্ত নিলেন। দেখভালের জন্য অধীনস্থ প্রশাসনিক কর্তাবাবুদের নামিয়েছেন মাঠে। সিদ্ধান্ত নিলেই হয় না, তার বাস্তবায়নই বড় কথা। চরম এই সত্যকে সামনে নিয়ে দু হাতে নয় তিনি যেন বহুহাতে সামলে চলেছেন সব কিছু। যদিও শুরুতে নিন্দুকের নাক সিটকানিসহ ‘অতো ভালো ভালো নয়’ মন্তব্যে কমতি ছিলো। অবশ্য ফেসবুকে কিছু সস্তা বস্তাপচা তোষামোদি মন্তব্য বিবেকি অবয়বকে বিবর্ণই করেছে।
চুয়াডাঙ্গায় বসবে আন্তঃজেলা ফুটবলের আসর। জেলা প্রশাসকের এ ঘোষণা যেদিন প্রথম শোনা গেলো, সেদিন ক্রীড়মোদি কারো মধ্যে জাগলো আশার আলো, কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন তুলে বললেন, যে জেলায় নির্মিত স্টেডিয়ামটি এখনও উদ্বোধনই হলো না, সেই খেলার মাঠে গড়াবে ফুটবল? ওটা তো এখন কেবলই আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু কিশোরদের বার্ষিক প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও আবার বর্তমান সরকারের বিশেষ নির্দেশনায়। সব মন্তব্য মলিন করে ক’দিনের মধ্যেই তিনি চুয়াডাঙ্গার বদন উজ্জ্বল করে উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৭। উদ্বোধনী দিনে নবীন প্রবীণ খেলোয়াড়ই শুধু নয়, ক্রীড়ামোদীদের উপচেপড়া ভিড় অভিজ্ঞদের অনুমানকেও হার মানিয়ে দিলো। এ আসরের সমাপনী এখনও বাকি। এরই মধ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, নভেম্বরে চুয়াডাঙ্গায় হবে সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎসব। আর সাংস্কৃতিক সপ্তাহে ক্রিকেট ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টেরও ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। না, এসব ঘোষণা নিয়ে নিন্দুকও খুলছে না মুখ। যদিও যে পথ হাঁটে তারই হোঁচট লাগার শঙ্কা থাকে, যে কাজ করে তার সমালোচনা সহ্য করার মতো হিম্মত থাকতে হয়। অবশ্য হোঁচটের কথা মাথায় রেখেই চলার পথে তিনি একা নন। হিসেবে এখনও পর্যন্ত স্বচ্ছতা স্পষ্ট। খাতওয়ারি আয়-ব্যয়ের হিসেব নিজের হাতে নয়, যাদের ঘাড়ে দেয়া হয়েছে দায়িত্ব তাদের ওপরই ন্যস্ত। তিনি শুধু দেখছেন ঠিক ঠাক হচ্ছে কি-না।
একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে তার দ্রুত বাস্তবায়ন যেমন অনুকরণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই জেলাবাসীর মধ্যে জাগিয়েছে চাওয়া পাওয়ার আশা। বহুদিনেও চুয়াডাঙ্গায় গড়ে ওঠেনি বিসিক শিল্পনগরী। শিশু হাসপাতাল? সেটাও চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে দুঃস্বপ্ন। অথচ অধিকাংশ জেলায় রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে। হ্রাস পাচ্ছে শিক্ষার মান। সদর আধুনিক হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার। প্রসূতি নিয়ে কতোটা দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তা মাঝে মাঝে কিছু চিত্র পত্রিকার পাতায় উঠে এলেও প্রতিকার মেলে না। গ্রামবাংলায় হাতুড়েদের অপচিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে যেন পুরো সমাজ। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর অসচ্ছতা গিলে খাচ্ছে উন্নয়ন। মাথাভাঙ্গার উৎসমুখ খনন করতে না পারায় শুষ্ক মরসুমে মরার দশা ফুটে উঠছে। ফলে এলাকার বিল বাঁওড়ে পানি তো থাকছেই না, ভূগর্ভের জলস্তরও নেমে যাচ্ছে নাগালের নিচে। চুয়াডাঙ্গায় শীতের সময় তীব্র শীত, গরমে তাপমাত্রা পৌঁছুই ৪২ ডিগ্রিতে। বৈরি আবহাওয়ার এ জনপদে শীতের সময় ছিন্নমূল মানুষগুলোর জন্য সরকার বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় শীতের শেষে। যা কোনো কাজেই লাগে না। আর গরমে? বিদ্যুতের বেহালদশা এমনই ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে, ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারাও চুয়াডাঙ্গায় কারখানা স্থাপনে আগ্রহ হারান। ফলে কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব। কিছু ভারী শিল্প স্থাপন করা হলেও বিদ্যুতের কারণেই তা স্থানান্তর হয়েছে গ্যাস সরবরাহের শিল্প এলাকায়। কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট। অথচ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর চিত্র ভিন্ন। বিদ্যুতও বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে দেখায় তাদের সক্ষমতা। আর আমাদের বাড়ে হতাশা। সেই কবে থেকেই শোনা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর চ্যাংখালী স্থলবন্দর হচ্ছে, পরে দর্শনা জয়নগরে হবে বলে শোনা গেলেও কোনোটারই তো জট খুলছে না। জেলা শহরের বাইপাস সড়কের প্রস্তাব বহুদিন ধরেই লালফিতেই বন্দি। জীবননগর-মহেশপুুর সীমান্তের পাথিলা খামারে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আদৌ হবে কি-না কে জানে! এরকম ‘হয়নি, হয় না, হচ্ছে না’-এর তালিকা করতে বসলে কাগজ যাবে কয়েক দিস্তা। এ কারণেই দেশের ৬৪ জেলার উন্নয়ন তালিকায় চুয়াডাঙ্গা ৬৩ নম্বরে বলে মন্তব্য করে মূলতঃ অবহেলিতের বিষয়টিই বোঝানো হয়। দক্ষ জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদের দক্ষ পদক্ষেপে দ্রুত শহীদ আবুল কাশেম সড়কের লেবেল ক্রসিঙের একদিকে আন্ডারপাস-অপরদিকে উড়াল সেতু স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রশ্নে চুয়াডাঙ্গাবাসীর হতাশা দূর করতে নিশ্চয় সহায়ক হবে। সব না হোক, কিছু হোক। এ প্রত্যাশা নিয়ে চুয়াডাঙ্গাবাসী আছে উন্নয়নের সাথে।